বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা পলিসি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২৪ মে) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেন জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তার জন্য নতুন এই পলিসির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রথমে টুইট করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে এ বিষয়ে তার বিস্তারিত বিবৃতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি চালুর বিষয়টি তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথু মিলার বলেন, “তারা কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি। তবে এসব ধারার অধীনে আইনসম্মতভাবে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছেন। বাংলাদেশের জনগণকে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে এবং এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, “বাংলাদেশের যেকোনো ব্যক্তিকে এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।”
প্রশ্নোত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে এটা একটি বার্তা যে আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে: ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।”
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটা নিষেধাজ্ঞা নয়। বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, তারা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় যে সহিংসতা চালিয়েছে, সেটার জন্যও ভিসা বিধিনিষেধ আসতে পারে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই এই ভিসা নীতিতে সরকারের উদ্বেগের কিছু নেই।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পরবর্তী সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রত্যাশার কথা বারবার বলে আসছে। বিশেষ করে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ঢাকা ও ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে নানা পর্যায়ের যেসব বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই প্রত্যাশার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।