টাঙ্গাইলে একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে ৫০-৭৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ১,০০৯ গাছ কাটার বন্দোবস্ত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করে গাছ কাটার টেন্ডারও দেওয়া হয়েছে।
প্রাণ-পরিবেশ রক্ষায় পৃথিবীব্যাপী আন্দোলন চলছে। সেখানে হাতে বিকল্প ব্যবস্থাপনা থাকলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও পরিবেশবাদিরা। তাদের দাবি, রাস্তার দুই পাশে এসব গাছ রেখেই রাস্তা প্রশস্তকরণ সম্ভব। কিন্তু সেটি না করে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে তারা।
২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) আরিচা (বরঙ্গাইল) ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ১,৬৩৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। এই প্রকল্পের অধীনেই গাছগুলো কাটার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
কাগমারি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ বছরের পুরোনো কয়েকটি কড়ই গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অনেক গাছের ডালপালা কাটা হচ্ছে। গাছগুলো কেটে গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি জানান, ঢাকার কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী দরপত্রের মাধ্যমে গাছ কেটে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। তারাই শ্রমিক দিয়ে গাছ কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, উন্নয়নের নামে গাছ কাটা কখনো ভালো হতে পারে না। এসব গাছ রেখেই রাস্তা করা যেত। গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।”
পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সোমনাথ লাহেড়ি বলেন, “পৃথিবীর কোনো দেশেই গাছ কেটে রাস্তা করা হয় না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন প্রকৃতি নষ্ট করে উন্নয়ন কাজ করা যাবে না। কিন্ত সেই নির্দেশনা কেউ মানছেন না। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধের আহ্বান জানাই।”
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মহাসড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কাটা কখনো কাম্য হতে পারে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ অত্যন্ত প্রয়োজন। গাছ না থাকার ফলে কার্বনডাইঅক্সাইড বেড়ে যায় ফলে ব্যপক তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এ থেকে রক্ষার জন্য প্রচুর গাছ লাগানো প্রয়োজন। সেখানে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।”
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুকুট মো. আবু সাইদ ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য সকল নিয়ম মেনেই গাছ কাটতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিলাম দরপত্রের মাধ্যমে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ১,০০৯টি গাছ কাটা পড়বে।