নবজাতকসহ না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা এর আগে স্বীকার করেছে রাজধানীর ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এ ঘটনায় প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা সাহার গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো হাসপাতালের ওপরই দায় চাপিয়েছেন ডা. সংযুক্তা।
মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীর পরীবাগের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে ডা. সংযুক্ত দাবি করেন, সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করার জন্য তিনি “সামাজিক আন্দোলন” শুরু করেছেন; সে কারণে একটা পক্ষ তার বিরুদ্ধে “মিডিয়া ট্রায়াল” চালাচ্ছে।
তার ভাষ্য, আঁখিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তিনি ছিলেন না। তাকে “না জানিয়ে” ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। সুতরাং শিশু ও মায়ের মৃত্যুতে তার কোনো দায় ছিল না।
এই চিকিৎসক বলেন, “যে মানুষটা দেশেই নাই তার নাম করে কেন রোগী ভর্তি করবেন? এটা কার স্বার্থে? আমি যদি অপারেশন না করি, যদি নাই থাকি, তাহলে রোগী ভর্তি করালেন কোন আক্কেলে? এটা অবশ্যই একটা বেআইনি ব্যবস্থা।”
এর আগে ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, “নবজাতকসহ আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতির প্রথমেই আছেন হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহা। তার কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারপর গাফিলতি ছিল ওটির চিকিৎসকদের, কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। যদিও তারা বলছে যে ফোনে পাওয়া যায়নি, দেরি করে এসেছেন।”
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে ভর্তি করানো হয়। গত ১৪ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে “ভুল চিকিৎসা' ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণা”র অভিযোগ তোলেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তানও।
জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্তও করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, ওইসময় ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না, অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি। এতে আঁখির অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। ঘটনার পর তাকে পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার দুপুরে সেখানে মারা যান তিনি।
ওই ঘটনায় গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় মোট ছয় জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে “অবহেলাজনিত মৃত্যুর” অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়। সেখানে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পারভেজ।
মামলাটিতে গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা এরই মধ্যে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের একটি দল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগীর রাখার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এ জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ করে দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
- আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতির কথা স্বীকার করল সেন্ট্রাল হাসপাতাল
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রচারণায় মানা
- স্বাস্থ্যমন্ত্রী: সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা
- সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসা': নবজাতকের পর মারা গেলেন মা
- সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ
- সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা, গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসকের স্বীকারোক্তি
- চিকিৎসকের ভুলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু, মরণাপন্ন মা