দেশে সাম্প্রদায়িকতা “বেড়ে যাওয়ায়” নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে বলে মনে করেন নারী অধিকারকর্মীরা। তারা নারীর জন্য অগ্রাধিকার দাবি করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান তারা।
নারী অধিকার সংগঠন “নারীপক্ষ”র ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী তরুণ নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন নারীপক্ষের সভানেত্রী ড. তাসনিম আজীম। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “নারীর অধিকারের লড়াই পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। বরং পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্র অধিকার দিয়েছে। কিন্তু নারীর শরীর, জমি, সন্তান কোনো কিছুর ওপর অধিকার নেই। কিন্তু এই অধিকার রাষ্ট্রকে দিতে হবে। নারীর সকল কাজে অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু অংশীদারত্ব বাড়েনি। সেখানে নজর দিতে হবে। তবেই নারীর অধিকার বাস্তবায়ন হবে।”
তিনি বলেন, “দেশে অসম্ভব রকমের সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। জড়িতদের পার পাওয়ার সংস্কৃতি বাড়ছে।”
কর্মক্ষেত্রে সাবলম্বী হলেও নারীদের ঘরের কাজও করতে হয়। যা তাদের জন্য আরও চাপের হয়ে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “কোভিড-১৯ এর সময় থেকে অনেক নারীই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছে। এতে তারা অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু একইসঙ্গে তাকে ঘরের কাজও সামলাতে হচ্ছে। যেটি তাদের জন্য দ্বিগুণ পরিশ্রমের কাজ হচ্ছে।”
এতে বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “নারীরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে সাবলম্বী হচ্ছে। তাই এখন সময় এসেছে সংসারের কাজও নারী ও পুরুষ উভয়ের ভাগ করে নেওয়ার।”
সম্মেলনে সংগ্রামী নারীর জীবনের কথা নামক অধিবেশনে নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন দেশের প্রথম নারী বয়লার অপারেটর জমিলা খাতুন।
তিনি বলেন, “ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উৎসাহ এবং সহযোগিতায় তিনি এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম লাইসেন্সধারী নারী বয়লার অপারেটর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।”
সাবেক যৌনকর্মী ও পরবর্তীতে শিশুদের জন্য আমরা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজেরা খাতুন বলেন, “নারীপক্ষর সঙ্গে কাজ করেই আমি বুঝতে পেরেছি যে আমরাও মানুষ, আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে।”
এর আগে, বাদ্যের তালে তালে বিকেল ৪টায় সম্মেলনের প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু ও রাত ৮টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- ২০৩০ অনুযায়ী নারী আন্দোলনকে বেগবান করতে সাভারে তিন দিনব্যাপী নারী সম্মেলন ১৩ জুন শুরু হয়ে চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। এতে সারাদেশ থেকে ২০০ জন তরুণ নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩০০ জন নারী অধিকার কর্মী অংশগ্রহণ করেছেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন- নারী অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সমাপনী অধিবেশনে কর্মশালার সুপারিশ উপস্থাপন ও ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণের মধ্য দিয়ে তরুণ নারী সম্মেলনের সমাপ্তি হবে।