দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশনের উত্তর পাশে প্রায় ১০০ তালগাছ লাগিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) সঞ্চালন লাইন টানার জন্য সেই গাছগুলোর ডাল কেটে ফেলে। ডাল কেটে ফেলা ৪০টির গাছের মধ্যে চারটি ইতোমধ্যে মারা গেছে। অন্যগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাসিন্দারা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, এক পাশে রেললাইন ও অন্য পাশে খাল থাকায় বাধ্য হয়েই তালগাছের ডাল ছেঁটে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে ১০০ তালগাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নেন। এ দলে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ত ম শামছুল হক, মনসুর রহমান, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, সুনীল কুমার সরকার প্রমুখ।
স্বাধীনতার পরের বছর ১৬ ডিসেম্বর শতাধিক তালের বীজ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭৫টি তালগাছ টিকে থাকে। এরপর কিছু মরে গেলেও সর্বশেষ ৪০টি তালগাছ বেড়ে ওঠে। শামছুল হকসহ অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলেও তাঁদের লাগানো গাছগুলো স্মৃতি বহন করছিল।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের দিকে আদমদীঘির মুরইল বাজার এলাকায় একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এখান থেকে নশরতপুর এলাকায় বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন টানার সময় গত এপ্রিলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পর্যায়ক্রমে ওই তালগাছগুলোর ডাল কাটতে শুরু করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও সুনীল কুমার সরকার বলেন, “স্বাধীনতা ও বিজয়ের জীবন্ত স্মারক হিসেবে তালগাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। পল্লী বিদ্যুতের লোকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত তালগাছগুলো নির্বিচার কেটে ফেলে চরম অন্যায় করেছেন।”
মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বলেছেন, পাঁচ/ছয়টি খুঁটি একটু সরিয়ে নিলে হয়তো কয়েকটা তালগাছের ডাল ছাঁটা লাগতো না।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, “তালগাছের মাথার সঙ্গে বিদ্যুতের লাইনের স্পর্শ হওয়ায় গাছগুলোর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ আইন মতেই এটা করা হয়েছে।”