আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা নদীর নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্ট এবং রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলের কারণে এসব এলাকায় পানির উচ্চতা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়তে পারে।
রবিবার বিডব্লিউডিবির বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।"
রবিবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি স্বাভাবিক উচ্চতার মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে পানির স্বাভাবিক উচ্চতার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানানো হয়েছে রবিবার সকাল ৯টায়। এই তথ্যে জানা যায়, পাটেশ্বরীতে ১৯৬ মিমি, কুড়িগ্রামে ২৬৪ মিমি, ডালিয়ায় ৫৪ মিমি, কাউনিয়ায় ৯৫ মিমি, চিলমারীতে ৬৪ মিমি, গাইবান্ধায় ৫৭ মিমি এবং ঠাকুরগাঁও পয়েন্টে ৬২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই সময়কালে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়েছে কিছু এলাকায়। এরমধ্যে ধুবড়িতে ১৪৬ মিমি, চেরাপুঞ্জিতে ১৯৫ মিমি, জলপাইগুড়িতে ১১৬ মিমি, পাসিঘাটে ১০৩ মিমি এবং উজানের উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যের শিলিগুড়ি পয়েন্টে ৭৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রবিবার সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদীর পানি স্বাভাবিক উচ্চতার ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ধরলায় কুড়িগ্রামে ৭৮ সেন্টিমিটার নিচে, ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার নিচে, হাতিয়ায় ৫১ সেমি এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ফুলছড়িতে ৪৫ সেন্টিমিটার, সাঘাটায় ৭৭ সেমি, বাহাদুরাবাদে ৪৩ সেমি, সারিয়াকান্দিতে ৪৯ সেমি, কাজিপুরে ৬৪ সেমি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় বিডব্লিউডিবি সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের বর্ষা ও উজান থেকে আসা পানিতে তিস্তার পাশাপাশি নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিডব্লিউডিবি-এর রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বাসসকে বলেন, “বিডব্লিউডিবির রংপুর জোনের অধীনে রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় মৌসুমি বন্যার সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বন্যা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, যন্ত্র ও বেড়িবাঁধের মেরামত কাজ পরিচালনার পাশাপাশি আমরা ক্রমবর্ধমান বন্যা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
“জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিডব্লিউডিবি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় মনিটরিং কমিটি ও জনপ্রতিনিধিরা বন্যা প্রবণ জেলাগুলোর উন্নয়নশীল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে, নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের ৪৪টি গেট খোলা বাকি আছে। রবিবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে নদীটি যথাক্রমে ১৭সেমি এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”
বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং বিডব্লিউডিবি এবং স্থানীয়, জনপ্রতিনিধিরা যখন এবং যেখানে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে উন্নয়ন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।”
তিনি যোগ করেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন্যার সময় ও পরে প্রয়োজনে ত্রাণ কার্যক্রম এবং উদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে।”