বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশিদকে চাকরি থেকে বহিষ্কার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে “গাজীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি” ও “সাধারণ শিক্ষার্থীদের” ব্যানারে মানববন্ধনে এসব দাবি জানান তারা।
সমাবেশে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, “বাংলাদেশের সকল আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। এর আগেও এডিসি হারুন অনেকগুলো অপরাধে জড়িত ছিল। এমনকি সে তার নিজের সহকর্মীকেও থাপ্পড় মেরেছিল। এরকম একজন ব্যক্তির দায় প্রশাসন নিতে পারে না। ”
ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সহ-সভাপতি কামাল খান বলেন, “এই এডিসি হারুনের কোনো পদবি ছাত্রলীগে ছিল না। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পায়। পরে পুলিশের রমনা জোনের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পায়। পুলিশের পদ ব্যবহার করে সে ছাত্রলীগের উপর হামলা করেছে। তার ব্যক্তিগত অপকর্ম ঢাকতে পুলিশের পদকে ব্যবহার করেছে। সে যে ধরনের কাজ করেছে তা ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত।”
গাজীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি আশিক রাব্বানী জিহান বলেন, “এডিসি হারুন যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন তার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল ছাত্রশিবিরের। পরে যখন এসব ফাঁস হয়ে যায় নাঈম এসব ধরিয়ে দিবে বলে সে নাঈমকে মেরে দাত ফেলে দেয়। সে প্রত্যাহারকে এখন ক্রেডিট হিসেবে নিয়েছে। ফলে তাকে স্থায়ী বহিস্কার করতে হবে।”
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশিদকে কক্সবাজারের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় রবিবার প্রথমে তাকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে সংযুক্ত করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে, শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে থানায় নিয়ে বেধড়ক নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
আহতরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম।
আহতদের সহপাঠী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুন শনিবার রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন বিসেএস কর্মকর্তা। এ সময় তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরই জেরে সঙ্গে থাকা ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে থানায় নিয়ে বেদম মারপিট করা হয়।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ অন্যায়ের শাস্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা যে করেছে, সে পুলিশের হোক বা যেই হোক না কেন, অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে। কেন করেছে, কি করেছে, আমরা জিজ্ঞাসা করবো। তার ভুল কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।