পোল্ট্রি ফার্ম শ্রমিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে অপহরণের পর পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে শিবলী সাদিক হৃদয়কে (১৯) নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (১ অক্টোবর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, “হত্যার পর আলামত নষ্ট করতে হৃদয়ের মরদেহ কেটে টুকরো করে অপহরণকারীরা। এরপর তার মরদেহের টুকরো থেকে মাংস ছাড়িয়ে হাড়গুলো পাহাড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।”
“পড়াশোনার পাশাপাশি রাউজানে একটি মুরগীর খামারে ব্যবস্থাপকের কাজ করতেন হৃদয়। গত ২৮ আগস্ট খামারের কর্মচারীরা তাকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। পরবর্তীতে হৃদয়ের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান এলাকা থেকে তার ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়।”
র্যাব জানায়, মুরগির খাবার বিক্রি নিয়ে হৃদয়ের প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে বিরোধ হয়। এর জেরে হৃদয়কে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে অপহরণ করে সীমান্তবর্তী কোদোলপুর ইউনিয়নের একটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গলা কেটে হত্যার পর কলাগাছের পাতা দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেওয়া হয়। মরদেহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে, এজন্য টুকরো করে শরীরের মাংস আলাদা করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, “হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিং থোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এর আগে, ২৮ আগস্ট রাতে খামার থেকে তাকে অপহরণের দুইদিন পর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। পরিবার তাদের দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। হৃদয়ের বাবা শফিক বান্দরবান এলাকার দুলাপাড়া নামে পরিচিত একটি স্থানে গিয়ে মুক্তিপণের টাকা দুই ব্যক্তির হাতে তুলে দেন।
মুক্তিপণের টাকা দিলেও হৃদয়কে মুক্তি না দেওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে রাউজান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রাম জোন সদর ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, “অপহরণের পর ২৯ আগস্ট উচিংথোয়াই ধারালো ছুরি দিয়ে হৃদয়কে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে। হত্যার পর প্রথমে কলা পাতা দিয়ে মরদেহ পাহাড়ের চূড়ায় লুকিয়ে রাখা হয়। মৃতদেহটি অক্ষত থাকলে পুলিশ এটি শনাক্ত করতে পারে এই ভয়ে তারা হৃদয়ের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।”
“উচিংথোয়াই দেহটিকে টুকরো টুকরো করে ছিন্নভিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তারা পুরো মরদেহ কেটে ফেলে। হাড়গুলো জঙ্গলে ছড়িয়ে দেয়।”
তিনি জানান, হত্যাসহ পুরো ঘটনার সঙ্গে খামারের পাঁচ কর্মচারী ছাড়াও, উচিংথোয়াইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের আরেকটি অপরাধী চক্র জড়িত ছিল।
র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান আরও জানান, মুক্তিপণের দুই লাখ টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকা উচিংথোয়াইয়ের কাছে ও বাকি ৫০ হাজার টাকা অন্য অপরাধীদের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।