বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রবেশের ছয়টি গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট, জয়বাংলা, বিশমাইল ও মীর মোশাররফ হোসেন হল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রদল। এই চারটি গেটই ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমবাগান ও ইসলামনগর এলাকা সংলগ্ন গেটেও তালা ঝুলিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচটি গেট অল্প কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। কিন্তু আমবাগান এলাকা সংলগ্ন গেটটি প্রায় এক ঘণ্টা তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। তবে সবগুলো গেটের তালা এক এক করে ভেঙে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর মওদুদ আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি ব্যক্তিগত কাজে সকালে বের হয়েছিলাম। মীর মশাররফ হোসেন হলের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখি তালাবদ্ধ। প্রধান গেটে এসে দেখি সেখানেও তালা দেওয়া হয়েছে ও ছাত্রদলের ব্যানার ঝুলছে। তবে কারা তালা লাগিয়েছে আমাদের চোখে পড়েনি। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি। কারণ, এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো প্রবেশ করবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্যই নিরাপত্তা অফিসকে দ্রুত সবগুলো তালা ভেঙে ফেলতে বলেছি।”
তালা দেওয়ার কথা স্বীকার করে ছাত্রদল নেতা নাইমুল হাসান কৌশিক বলেন, “সরকার যতো বেশি বাধা ও হামলা-মামলা দেবে- সরকারের ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের পতন তত ভয়ংকর হবে। আমরা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই রাজপথেই মোকাবিলা করব। আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই- ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ফাও খাওয়া বন্ধ করে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তারা তাদের বিগত দিনের অন্যায়ের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দেশের মানুষের এই আন্দোলনে পাশে থেকে তাদের কৃতকর্মের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করবে। অন্যথায় তাদের রাজপথে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।”
ছাত্রদলের আরেক নেতা জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের পতনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন রয়েছে। তাই তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা জাবির প্রবেশদ্বারে তালা লাগিয়েছি।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) বলেন, “যেসব গেটে তালা দেওয়া হয়েছিল সেগুলো ভেঙে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করা হয়েছে। যে বা যারা এই কাজ করেছে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বিশৃংখলা হয়নি। আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত।”
প্রসঙ্গত, শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রবিবার সারাদেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পালন করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।