সরকার পতনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ২৪ দিনে সারাদেশে ১৯৭টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ১৮৫টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, পুলিশ বক্স, বাস কাউন্টারেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় দুইজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মারধরের শিকার হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিবাহী গাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া আগুনে মোট ১৮৫টি যানবাহন ও ১২টি স্থাপনা পুড়েছে। যানবাহনের মধ্যে বাস ১১৮টি, ট্রাক ২৬টি, কাভার্ড ভ্যান ১৩টি, মোটরসাইকেল আটটি, প্রাইভেটকার দুটি, মাইক্রোবাস তিনটি, পিকআপ তিনটি, সিএনজি তিনটি, ট্রেন দুটি, নছিমন একটি, লেগুনা তিনটি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি একটি, পুলিশের গাড়ি একটি, অ্যাম্বুলেন্স একটি, বিএনপির দলীয় কার্যালয় পাঁচটি, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় একটি, পুলিশ বক্স একটি, কাউন্সিলর অফিস একটি, বিদ্যুৎ অফিস দুটি, বাস কাউন্টার একটি, শোরুম দুটিসহ আরও দুটি স্থাপনা পুড়েছে।
এসব আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৪১টি ইউনিট ও ১,৮৮৮ জন সদস্য কাজ করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মী ও তিনজন সাধারণ মানুষকে আহত হয়েছেন। তবে এসব অগ্নিকাণ্ডে নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে সবমিলিয়ে মোট ৩৪ জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৩০টি জেলায় আগুনের ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলার হিসেবে দেশের ৬০টি উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ৪৩৫টি উপজেলায় কোনো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। জেলা হিসেবে গাজীপুরে, উপজেলা হিসেবে বগুড়া সদরে আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা সিটিতে ৯৫টি, ঢাকা বিভাগে ৩৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪টি, বরিশাল বিভাগে সাতটি, রংপুর বিভাগে সাতটি, খুলনা বিভাগে দুটি, ময়মনসিংহ বিভাগে দুটি এবং সিলেট বিভাগে একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিরপুরে এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। মিরপুর এলাকায় ১৭টি, গুলিস্তানে ৯টি, নয়াপল্টন-কাকরাইল এলাকায় সাতটি, খিলগাঁও-মুগদা এলাকায় সাতটি, পোস্তাগোলা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাতটি, মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় পাঁচটি, মোহাম্মদ চারটি ও বারিধারা চারটি করে আগুনের ঘটনা ঘটে।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুরে ১৬টি, চট্টগ্রামে ১৪টি, বগুড়া ১৩টি, নারায়ণগঞ্জ ছয়টি, মানিকগঞ্জ চারটি, ফরিদপুর চারটি, লালমনিরহাট চারটি ও নাটোর চারটি করে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।
উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। বগুড়া সদরে আটটি, গাজীপুর সদরে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জ সদরে চারটি, ফেনী সদরে তিনটি এবং কালিয়াকৈর উপজেলায় চারটি করে আগুনের ঘটনা ঘটে।