প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলোর মধ্যে অধিকাংশই (৬০-৭০%) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে সক্ষম (রেজিস্ট্যান্ট)। এমনকি শেষ ধাপের জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে বিবেচিত যেমন কার্বাপেনেম, কোলিস্টিনের প্রতি কিছু ব্যাক্টেরিয়া ৯০% রেজিস্ট্যান্ট। আরটি-পিসিআরসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সংগৃহীত ব্যাক্টেরিয়া থেকে ১৯টিরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিন পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ‘‘ওয়ান হেল্থ অ্যাসেসমেন্ট অব এমার্জিং অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স জিনস ইন বাংলাদেশি লাইভস্টোক, ফিডস এন্ড ম্যানিউর’’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষকরা এসব তথ্য জানান। এর উদ্যোক্তা জাবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, এতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স এবং ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার।
গবেষকরা জানান, গবাদিপশুর মোট ২৪০টি নমুনা থেকে ৩০টিরও বেশি জিনোমের মোট ২২৫টি ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে। মানুষের মোট ১১০টি নমুনা (ডায়রিয়াল) থেকে ৩০টিরও বেশি জিনোমের ১৪০টি ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মোট নয়টি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের ২০টি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি ‘‘অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাসসেপটিবিলিটি টেস্ট’’ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তারা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পোল্ট্রি ফিড, গোবর এবং জৈব সারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত নমুনা থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া পৃথকীকরণের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। এদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক (বিটা ল্যাকটাম, কাবোপেনেম, কোলিস্টিন) এর প্রতি রেজিস্ট্যান্ট।’’
প্রকল্পের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম বলেন, ‘‘অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার আগে থেকেই লক্ষণীয় ছিল, এমন ক্ষেত্রগুলোতে বেশি রেজিস্ট্যান্সি দেখা গেছে। আরটি-পিসিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে অতি সূক্ষ্মভাবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে জিন উপস্থিতি শনাক্তকরণ ছাড়াও আণবিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রয়োগ, প্রোটিন শনাক্তকরণ, মিউটেশন, অণুজীবের উপস্থিতি অতি স্বল্প সময়ে সম্ভবপর হয়েছে।’’
ওয়ার্ল্ড হেলথ-এর পোস্ট ডক্টরাল ফেলো ড. সাবরিনা হোসাইন বলেন, ‘‘গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ইতিহাস এবং রেজিস্ট্যান্ট জিনগুলো কোন প্রক্রিয়ায় স্থানান্তর হচ্ছে তা শনাক্তকরণ করা জরুরি।’’
সেমিনারে আদ-দীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রধান ড. কাজী সেলিম আনোয়ারও বক্তব্য রাখেন।