অসুস্থ স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে মেহেরপুরের গাংনী থেকে রাজশাহীতে এসেছিলেন আবুল বাসার (৩০)। ভাগ্যের ফেরে তিনি নিজেই এখন হাসপাতালে ভর্তি। রাস্তায় ককটেল বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত বাসার এখন দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায়। ককটেলের কাচে তার বাঁ চোখের আইবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর রেলগেট এলাকায় অটোরিকশা লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির ডাকা অবরোধে বুধবার রেলগেট এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একটি ককটেল গিয়ে পড়ে চলন্ত অটোরিকশায়। এতে অটোরিকশাটির সামনের কাচ ভেঙে যায়। আহত হন চালক আবদুল জলিল (৪৫) ও তার পাশে বসে থাকা যাত্রী আবুল বাসার (৩০)। জলিলের পেটে গুরুতর জখম হয়েছে। আর বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাসারের। বাসার রেলওয়ের খালাসী পদে চাকরি করেন।
স্থানীয়রা তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসারের চোখে অস্ত্রোপচার চলে।
অস্ত্রোপচার শেষে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মদ জানান, বাসারের বাঁ চোখে ছোট ছোট কাচের টুকরা ঢুকে গেছে। এতে চোখের আইবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে কাচ বের করার পাশাপাশি লেয়ার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা। রোগীর চোখ এখন বন্ধ। তার এই চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা খুব কম।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বাসার রেলওয়ের সৈয়দপুর কারখানার খালাসী। হাসপাতালে রেলওয়ের লোকজন আছেন। তার সর্বোচ্চ চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমি নিজে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়েছি। চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছেন আইবল থেঁতলে গেছে। এক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১০%।
বাসারের স্ত্রী শাহানাজ পারভীনের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি জানান, মেহেরপুরের গাংনী থেকে তারা ট্রেনে রাজশাহী আসেন। স্টেশনে নেমে অটোরিকশায় চড়ে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন অটোরিকশার পেছনের সিটে। বাসার ছিলেন সামনে। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখেন, তার স্বামী চোখে হাত দিয়ে পড়ে গেছেন। অটোরিকশা চালক জলিলেরও সারা শরীরে কাচ ঢুকে গেছে। পেটে মারাত্মক জখম হয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার টিটো (২৭), বিনোদপুর এলাকার মনিরুল ইসলাম (২৭) ও গোদাগাড়ী উপজেলার শাহাদত হোসেনকে (২৭) আটক করা হয়। তারা জেলা ও থানা কৃষক দলের নেতাকর্মী বলে পুলিশ জানায়।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ওই এলাকায় মিছিল বের করেছিল। মিছিলের পরে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিলেন। তখন লোকজন ধাওয়া দিয়ে তিনজনকে আটক করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
দুলাল আবদুল্লাহ