কক্সবাজার-৪ (উখিয়া ও টেকনাফ) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বদির সন্তান দাবিদার মোহাম্মদ ইসহাক।
এই আসনে বদি ও তার স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীনা আক্তার নৌকার টিকেট চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান শাহীনা। ফলে ইসহাককে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হতো বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তারের সঙ্গে। তবে সেই সুযোগ আপাতত বন্ধ করে দিলো নির্বাচন কমিশন। ইসহাকের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এই আসনে ৯ জন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাতিল করা হয় তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
বৈধ প্রার্থীরা হলেন- শাহীন আক্তার (আওয়ামী লীগ), নুরুল আমিন সিকদার (জাতীয় পার্টি), ফরিদ আলম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মুজিবুল হক মুজিব (তৃণমূল বিএনপি), মোহাম্মদ ইসমাইল (বাংলাদেশ কংগ্রেস) এবং ওসমান গনি চৌধুরী (ইসলামি ঐক্য জোট)।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন- সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল বশর এবং বদির সন্তান দাবি করা মোহাম্মদ ইসহাক।
মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “যাদের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে তারা সকলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রে মোট ভোটারের ১% ভোটারের সইয়ে অসংগতি রয়েছে। তাই তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।”
এর আগে ইসহাক ঘোষণা দিয়েছেলেন “সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে” বাবার বিরুদ্ধে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ইসহাক বলেছিলেন, “আমার বাবা আবদুর রহমান বদি সম্মানিত মানুষ। তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। প্রার্থী হয়েছেন ছোট মা শাহীন আক্তার। আমি নির্বাচিত হলে বাবার মতো জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করব। কারণ আমার বাবা গরিবের বন্ধু।”
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফের কায়ুকখালীর ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসহাক বদিকে নিজের পিতা দাবি করে টেকনাফের সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এই মামলার পরে আলোচনায় আসেন ইসহাক।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়, গত ৩০ বছর আগে টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ার সুফিয়া খাতুনকে গোপনে বিয়ে করেন বদি। সুফিয়া খাতুন অন্তস্বত্ত্বা হলে অনাগত সন্তানকে হত্যার চেষ্টা চালান বদি। তাতে সফল না হয়ে সুফিয়াকে স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে বিয়ে দেন। এ সময় সুফিয়ার পেটে বাচ্চা থাকার কথা গোপন রাখা হয়। পরে জানতে পেরে সেই স্বামী সব মেনে নিয়ে সংসার করেন। এরপরও বাচ্চাসহ সুফিয়াকে হত্যার চেষ্টা করে বদির পরিবার।
ইসহাক মামলার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে এর আগে বলেছিলেন, “মূলত সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বাবার আসনে প্রার্থী হয়েছি। আমি পিতৃপরিচয় চাই। বদি আমার বাবা। অথচ তিনি আমাকে অস্বীকার করছেন। এ জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। মামলাটি চলমান। আশা করছি, মামলার রায় আমার পক্ষে আসবে। বাবা যদি আমাকে সন্তান হিসেবে মেনে নেন, তাহলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব, এর আগে নয়।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান থাকায় নির্বাচন করতে পারেননি আব্দুর রহমান বদি। পরে তার স্ত্রী শাহীনা আক্তারকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও তার স্ত্রীর ওপর ভরসা রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি।