যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি হেলিকপ্টার করে রইশুদ্দীনের মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পৌঁছায়। পরে তার মরদেহ উপজেলার সাহাপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় ভবানীপুর কবরস্থানে জানাজা শেষে তার মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুরে। গত সোমবার বেনাপোলের ধান্যখোলা জেলেপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।
রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের একচালা একটি ঘর ও পাশের রান্নাঘরে তালা। এই ঘরেই চার বছরের মেয়ে ও চার মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী নাসরিন বেগম থাকতেন।
রইশুদ্দীনের বাবা কামরুজ্জামান জানান, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইশুদ্দীন ছিলেন পরোপকারী। নাতি-নাতনিকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের সহায়তা চান তিনি।
অন্যদিকে, রইশুদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, “দুইটা অবুঝ বাচ্চা ও আমারে একা ফেলে চলে গেল। তাদের মানুষ করব কীভাবে? ওরে ছাড়া আমি চলব কীভাবে?”
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, সোমবার ভোর ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্টসংলগ্ন এলাকায় একদল গরু চোরাকারবারিকে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করতে দেখে বিজিবির টহল দল। এসময় টহল দলের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে দৌঁড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলছুট হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে জানা যায়, বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় জালিয়াপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সোমবার ভোরে তারা অন্তত ৭-৮ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন। পরে সকালে সীমান্তের ওপারে এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
তারা জানান, ধান্যখোলা জালিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভোরে গরু চোরাকারবারিদের ধাওয়া করার সময় বিএসএফের গুলিতে আহত হন মোহাম্মদ রইশুদ্দীন নামের ওই বিজিবি সদস্য। এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী-বিএসএফের গুলিতে রইশুদ্দীন নিহত হলে দুদিন পর মরদেহ ফেরত পায় বিজিবি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তরে। সেখান থেকে আকাশ পথে হেলিকপ্টারে করে রইশুদ্দীনের মরদেহ নিয়ে আসা হয় শিবগঞ্জে। হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে।
পুলিশি নিরাপত্তায় সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহটি। মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নিহতের পরিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি ও যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ভবানিপুর কবরস্থানে জানাজা শেষে মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।