হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাড সংলগ্ন এলাকার আশপাশের এলাকায় কম্পনটি ভূমিকম্পের কারণেই হয়েছিল বলে দাবি করেছে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি। যদিও স্থানীয়রা এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করেছেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “বিবিয়ানায় ঘটনাটি ঘটেছে, তা প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের কারণে। এখানে মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিবিয়ানা তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ ও ২৮ নম্বর কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২৮ নম্বর কূপ খনন কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২৭ নম্বর কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট বিভাগে কোনো ভূমিকম্পের ঘটনা রেকর্ড করা হয়নি।
এদিকে এ প্রতিবেদনকে পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, নতুন কূপ খননকালে ভুল প্রক্রিয়ায় খনন করায় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এতে বাড়িঘর ফেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, ক্ষতিপূরণ এড়াতে তদন্ত কমিটি পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে।
কসবা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল আহমদ বলেন, “শুনেছি তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, এটা পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন। মূলত গ্যাসফিল্ডে ড্রিলিং কাজের জন্য কৃত্রিম ভূমিকম্প সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।”
দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালিক মিয়া বলেন, “পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয় যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা আলাপ-আলোচনা করে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করবো। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ শেভরন থেকে আদায় করতে সরকারের সহযোগিতা চাই।”
গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে ওই এলাকা ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাডের পশ্চিমে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাগ, জামারগাঁও, রাধাপুর, রামেরগাঁও, মধুরা, সাদুল্লাহসহ বেশ কিছু গ্রাম আছে। এসব গ্রামে লাখো মানুষের বসবাস। শনিবার রাতে সেখানে বেশ কয়েকবার কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ছোটাছুটি করেন। এর জেরে স্থানীয়রা রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের সামনে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ও পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. সালাহ উদ্দিন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের চৌরাস্তা এলাকায় সমাবেশ করেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা বসতঘরে ফাটল ধরার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চান। নাহয় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
শেভরন বাংলাদেশের পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান বলেন, “আমরা গ্যাসক্ষেত্র থেকে যতটুকু গ্যাস পাই, তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে থাকি। এ প্রকল্প পরিচালনার কাজ করে থাকে পেট্রোবাংলা।”