বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় চালু হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দর এবং ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌ-বন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযান চলাচল। উদ্বোধনের পর এই নৌপথে সুলতানগঞ্জ থেকে ময়ার উদ্দেশে পণ্যবাহী একটি নৌযান ছেড়ে গেছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় পদ্মা ও মহানন্দার মোহনায় সুলতানগঞ্জে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রপ্তানিকারক বশির আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “প্রথম দিন পরীক্ষামূলকভাবে ৩১০ ব্যাগে ১১,৭০০ কেজি গার্মেন্টস ঝুট কার্টন পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এই পথ দিয়ে এই মালামাল পাঠানো হলো। এর আগে বুড়িমারী ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠাতাম। এবার উদ্বোধন উপলক্ষে এই পথ দিয়ে পাঠালাম। সময় কম লাগবে। মাত্র দেড় ঘণ্টায় সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌ-বন্দরে পৌঁচ্ছে যাবে। আশা করছি, এই নৌপথ আমাদের জন্য সহজ হবে। সময় ও খরচ কম পড়বে।”
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌ-ঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। এক সময় এটি বন্ধ হয়ে যায়। উদ্বোধনের ফলে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদীবন্দরের মর্যাদা পেল।
সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন, বছরে এ নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান ও মায়া নৌ-বন্দর পর্যন্ত নৌপথে নৌযান চালু এবং রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নৌ-বন্দর প্রতিষ্ঠায় গত পাঁচ বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এটি তার একটি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দর চালু এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচল শুরুর মাধ্যমে মেয়র লিটনের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলো। পূরণ হলো রাজশাহীবাসীর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন।
এদিকে, সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দর ও সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-সচিব সেলিম ফকির।
অনুষ্ঠানে মেয়র লিটন সাংবাদিকদের বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত, লেখালেখি ও ডিও লেটার দিয়েছি। ফলে এটি গতিশীল হয়েছে। অবশেষে প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচল শুরু হলো। পরবর্তী সময়ে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে। রাজশাহী নগরীতে নৌ-বন্দর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত। পিছিয়ে পড়া রাজশাহীতে নৌ-বন্দর চালু হলো। এটির মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক দিক দিয়ে উপকৃত হব।”
এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌপথে বাণিজ্য চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্য সংকটের কারণে তা কার্যকর করা হয়নি। এজন্য নৌপথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌ-বন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌ-ঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সারাবছর সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।