রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। প্রথম দিন বিজ্ঞান বিভাগের শেষ গ্রুপের পরীক্ষা ছিল বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে “ধূমকেতু” ট্রেনে করে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের সঠিক সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতে ঘটেছে অন্য রকম ঘটনা।
এই চেষ্টা করতে গিয়ে দুটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব করতে হয়েছে, উল্টো পাশের একটি ট্রেনকে থামিয়ে তার ইঞ্জিন কেটে নিয়ে রাজশাহীগামী ট্রেনে যুক্ত করতে হয়েছে, একটি নির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করতে হয়েছে আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, ট্রেনটি নির্ধারিত সর্বোচ্চ গতিতে চলছে কি-না, তা পুরো পথেই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। লাইন ক্লিয়ার করতে নিতে হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার গতকাল সেই ভ্রমণের কাহিনি লিখেছেন তার ফেসবুক পোস্টে।
ওই ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী “ধূমকেতু এক্সপ্রেস” নামের ট্রেনে রওনা হন। ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়তেই দেরি হয়ে যায়। বেলা ১১টায় হিসেব করে দেখা যায়, ট্রেনটি বিকেল ৩টা নাগাদ রাজশাহীতে পৌঁছাবে। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ট্রেনটি অন্য ট্রেনকে বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল।
লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে বসা “চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের” ইঞ্জিন এনে “ধূমকেতু এক্সপ্রেস” আবার চালু করা হয়। তখন হিসেব করে দেখা যায়, ট্রেনটি বিকেল ৪টায় রাজশাহী পৌঁছাবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে অসীম কুমার তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান।
ট্রেনটি তখন সর্বোচ্চ অনুমোদিত ৮৫ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। তবে দুশ্চিন্তা ছাড়ছিল না। সময়মতও পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছিল। উপায় না পেয়ে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাস করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেনটি থামে। পরে শিক্ষার্থীরা দ্রুত দৌড়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসেন।
এ বিষয়ে রেলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চাকরি জীবনের ১৮ বছরে তিনি এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।
ধূমকেতুর দেরি যেসব কারণে
ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলের পাকশী বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ঢাকা-রাজশাহী রুটের চারটি ট্রেনেরই সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়। প্রতিটি ট্রেনে যুক্ত করা হয় বাড়তি কোচ। এ কারণে এই রুটে ট্রেনের সময়সূচিতে গড়বড় লেগে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রেনে গোটা সপ্তাহে যে লেট হয়, সেটি সাপ্তাহিক ছুটিতে সমন্বয় করা হয়। কিন্তু এখানে সে সুযোগ ছিল না। আবার অতিরিক্ত কোচ যুক্ত হলে সেখানেও কিছু বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হয়। ট্রেনে পানি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা কাজ করতে হয়। সেটিও করা যায়নি। আবার রেললাইন ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেনের লোকোমেটিভ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে এই ঘটনাটি ঘটে।”
যেভাবে বাঁচানো হয় সময়
উল্লাপাড়া থেকে রাজশাহী যেতে ট্রেনে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। সেখানে ধূমকেতু পৌঁছে ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটে। এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, “চালককে বলেছি জোরে চালাবেন। রেলে একটা অনুমোদিত সর্বোচ্চ গতি থাকে। আমরা কন্ট্রোল রুমে বসে সেটি ট্র্যাকিং করেছি। যখনই দেখেছি গতি কমে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে তাগাদা দিয়েছি। আবার লাইন ক্লিয়ার রাখতে হয়। সেটি সাধারণত হাতে হাতে করা হয়। কিন্তু এতে সময় নষ্ট হতো। তাই সেটি না করে মোবাইল ফোন দিয়ে করেছি। এভাবেই ২৮ মিনিট সময় বাঁচাতে পেরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের তাড়না ও ভীতি দুটোই কাজ করেছে। তাড়না বলতে এটা আবেগের বিষয়। আশা নিয়ে কত ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। রাজশাহীতে এই সময়ে প্রতি বছরই অনেক ছেলেমেয়ে আসে। সেখানে থাকার জায়গা পাওয়াও কঠিন। এ কারণে অনেকে আগের রাতে বা অন্তিম মুহূর্তে আসে। যদি পরীক্ষা দিতে না পারে, তাহলে তো তরুণরা আশাহত হবে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। এছাড়া ভীতি হলো শিক্ষার্থীরা যদি বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়! অনেক সময় তাদেরকে উসকানি দেওয়া হয়। তখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত।”
ঘটনার বিষয়ে জানাতে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। সেখানে তিনি বলেন, “ধূমকেতু এক্সপ্রেসে থাকা শতাধিক পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছি। তাদের প্রায় ২০ মিনিট দেরি হয়েছিল। তবে তাদেরকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি। নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে কেন্দ্রে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”