Sunday, May 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

আগামী বছর রমজানে স্কুলে ছুটি কমতে পারে আরও

  • ‘বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে পুরো রমজানে ছুটি নেই’
  • ‘দেশে এক সময় শবে-কদর থেকে ঈদ পর্যন্ত ছুটি থাকত। তখন সমস্যা হয়নি, এখন কেন হবে?’
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১১:৩০ এএম

এ বছর পুরো রমজান মাসজুড়ে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার দাবিতে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে রমজানের প্রথম ১৫ দিন বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, রমজানের প্রথম ১০ দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

এই দুই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন শফিউর রহমান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। সেই রিটের শুনানিতে অংশ নিয়ে রমজানে স্কুল বন্ধ রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট।

তবে হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের শুনানিতে অংশ নিয়ে রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

অর্থাৎ আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে ২১ মার্চ পর্যন্ত।

এদিকে, এ বছর রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০ দিন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ থাকলেও আগামীতে রমজানে এ ছুটি আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমান শিখনকাঠামোতে ১৮৫ দিনের বেশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার হিসেব ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এমনটা হতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “বছরে ১৮৫ দিন প্রয়োজন। সে কারণে ছুটি আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে হবে, আর সে কারণেই আমরা আগামী বছরের শুরুতেই হিসাব-নিকাশ করে শিক্ষাপঞ্জিকা প্রকাশ করব।”

আগামীতে পুরো রমজান মাসজুড়ে ছুটি না দিলে ধর্মীয় কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে কি-না; এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, “ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে রমজানে ছুটি মাত্র ২ দিন, পাকিস্তানে ৩ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে পুরো রমজান মাসজুড়ে ছুটি নেই। সেসব দেশে রোজার মধ্যে বিদ্যালয় চলছে। সেসব দেশে তো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের কেন হবে? তাছাড়া বাংলাদেশে এক সময় শবে-কদর থেকে ঈদ পর্যন্ত ছুটি থাকত। তখন তো সমস্যা হয়নি, কেউ আপত্তিও করেনি। তাহলে এখন কেন হবে?”

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রমজান মাসে বিদ্যালয় খোলা থাকত। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোয় রমজান মাসে বিদ্যালয় খোলা থাকে। তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কারণ তারা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই রমজানে বিদ্যালয় খোলা রাখে। তাহলে বাংলাদেশে কেন সমস্যা হবে? শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন বিবেচনা করে যেকোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেবে, এটাই স্বাভাবিক।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন বলছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার দাখিল স্তর পর্যন্ত শিখন ঘণ্টা ঠিক রাখতে হলে আগামী রমজান মাসে ছুটি কমানো প্রয়োজন হতে পারে। আর সে কারণে ২০২৫ সালের শুরুতেই শিক্ষাপঞ্জিকা প্রকাশের আগেই বিষয়টি ঠিক করে নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “শুধু রাজধানী শহরের বিবেচনায় শিখনঘণ্টা ঠিক থাকবে আর প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে, তা হবে না। সে কারণে ১৮৫ দিনের বেশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার হিসেব ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আগামী রমজান মাসে প্রয়োজনে ছুটি কমানো হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের কারণে ছুটি দিলে সেখানে শিখনঘণ্টা কমে যায়, বেশি শীত পড়লে ছুটি দিলে শিখনঘণ্টা কমে যায়; এসব কারণে শিখন ঘণ্টা হিসাব করে ১৮৫ দিনের বেশি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষাপঞ্জিকা করা হতে পারে।”

এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে তথ্য সংগ্রহসহ নানা কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হবে। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়ানো হয়েছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির ১০৪ দিন। ফলে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১৮৫ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে বাড়তি হিসেবে ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার সময় এসেছে।

   

About

Popular Links

x