Monday, March 17, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

নাফ নদীতে ‘যুদ্ধজাহাজ’, রাখাইনের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ

  • মিয়ানমারে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন এলাকা
  • শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ‘সামরিক নৌযান’ দেখা গেছে
  • আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে আবারও আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকা। শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে মিয়ানমারে অন্তত ৪০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন এলাকা। এতে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা।

এর আগে, গত ১০-১২ দিন ধরে রাতের বেলায় মিয়ানমার সীমান্তের কয়েকটি গ্রামে মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণ ঘটে আসছিল।

এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের একটি “সামরিক নৌযান” দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, শুক্রবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জাহাজটি সেখানে দেখে যায়। তারপর সেটি সরে যায়। তখন থেকেই শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিন্তু বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত একের পর এক বিকট শব্দ ভেসে আসে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, “বিকেল পর্যন্ত ৪০টির বেশি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। বিস্ফোরণের কারণে দ্বীপে প্রবল কম্পন দেখা দেয়, যা ভূমিকম্পের সময়েও হয় না। এ সময় আতঙ্কে দ্বীপের মানুষেরা ছুটাছুটি শুরু করেন।”

আক্তার কামাল বলেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের দক্ষিণের গ্রাম হাস্যুরাতে আরাকান আর্মির অবস্থানে সরকারি বাহিনী হামলা শুরু করেছে। বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের জলসীমানায় সে দেশের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজও অবস্থান নিয়েছে। সেন্ট মার্টিন জেটি ঘাটে দাঁড়িয়ে হাস্যুরাতের দৃশ্য খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে।”

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, “টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর গত রবিবার থেকে মংডু টাউনশিপের উত্তরের নাকপুরা, বলিবাজার, পেরাংপ্রু, কাওয়ারবিলসহ কয়েকটি গ্রামে রাতের বেলা মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণ ঘটে আসছিল। গত দুই দিন সংঘাত মংডুর দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ দিনের বেলা সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারে মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “সকালে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের জলসীমায় একটি বড় ধরনের জাহাজ দেখা গিয়েছিল। এটি যুদ্ধজাহাজ নাকি দেশটির অন্য কোনো জাহাজ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুপুরের আগেই জাহাজটি সেখান থেকে দক্ষিণে সরে গিয়ে সেন্ট মার্টিনের বিপরীতে অবস্থান নেয়।”

তিনি বলেন, “কিন্তু জাহাজটি নাফ নদী সীমান্ত থেকে সরে যাওয়ার পরপরই মিয়ানমারের ওপার থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।”

মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে গত কয়েক মাস ধরে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে বিদ্রোহীরা।

সেনা ও বিদ্রোহীদের এই লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের বাংলাদেশের মানুষের ওপরও। গত কয়েক মাসের মধ্যে ওপার থেকে ছুটে আসা গুলিতে দুই বাংলাদেশির প্রাণ গেছে; আহত হয়েছেন কয়েকজন। সীমান্তের এপারে কারো কারো ঘরবাড়িতে এসে পড়ছে গোলা। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

   

About

Popular Links

x