যুদ্ধে অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকা জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় খরচ করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “একটি কথা না বলে পারছি না, এই যুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থ ব্যয় না করে সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় যদি ব্যয় করা হত, তাহলে বিশ্ব রক্ষা পেত।”
সোমবার (২২ এপ্রিল) ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে “ন্যাশনাল অ্যাডাপশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪”-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার ১৯৭২ সালেই বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করেছিলেন। দেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য তিনি ১৯৭৫ সালের ১ জুলাই ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য অর্জনে তিনি বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।”
তিনি বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এর আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৯৬৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।”
সামুদ্রিক বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, উপকূলীয় বনায়ন ইত্যাদি কর্মসূচিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার তথ্য অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং গত বছরের ঘূর্ণিঝড় “মোখায়” ক্ষয়ক্ষতির পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই সময়ে (১৯৭০) প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু মোখায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত দেড় দশকে পার্বত্য ও শাল বনাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৮ হেক্টর এলাকায় বৃক্ষরোপণসহ ৮৯,৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বন সৃজন করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান ০.৪৮%-এর কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭%, এ শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখতে উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ইন্টেডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি) প্রণয়ন করে এবং ২০২১ সালে তা হালনাগাদ করে ইউএনএফসিসিসিতে জমা দেয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬.৭৩% এবং শর্তযুক্ত ১৫.১২% গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে। এ পরিকল্পনায় আমরা ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে আটটি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি। আগামী ২৭ বছরে ন্যাপে গৃহীত কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।”
সরকারপ্রধান বলেছেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসির ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল থাকে অর্থপ্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।”