মোটরসাইকেল চেপে গিয়েছিলেন অসুস্থ স্বজনকে দেখতে। মহাসড়ক ধরে ফেরার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা ভ্যান দেখে দুর্ঘটনা এড়াতে কষেন ব্রেক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মতিউর রহমান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
তিন চাকার যানের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই।
সচেতন মহল বলছে, প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও পুলিশের দাবি, সড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যানসহ সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে এজন্য জনগণের আরও সচেতনতা প্রয়োজন।
মহাসড়কে তিন চাকার যানের কারণে ঠিক কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
তবে পুলিশের তথ্য বলছে, ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জের তরা ব্রিজ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কে গত এক বছরে ৩৯ দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) তথ্য বলছে, ধামরাইয়ের ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কে ৯৫ দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
সরেজমিনে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার দ্রুতগামী যানবাহনের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলছে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যানসহ তিন চাকার যান। সার্ভিস লেন ছেড়ে মূল লেনে, কখনো উল্টোদিকে নির্বিকার চালাচ্ছেন চালকরা। টানা চার দিন সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব যানবাহন বন্ধে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। ফলে বিনা বাধায় সড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে তিন চাকার যান।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আব্দুল লতিফের সঙ্গে। তার ভাষায়, ‘‘আমি ঋণ করে ভ্যানটি কিনেছি। ভেতরের সড়কে ভাড়া কম। এখন যদি মহাসড়কে না চালাতে পারি, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। নিরুপায় হয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছি।’’
আরেক চালক সেলিম হোসেন বলেন, ‘‘মহাসড়কে অটোরিকশা চালাই না, পথে অল্প রাস্তা পড়ে, সেটুকু দিয়ে চালাই। পুলিশ বাধা দেয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে দাবাড় (তাড়া) দেয়। আর দেখি না।’’
এদিকে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে ক্ষুব্ধ পরিবহন চালকেরা।
ইস্রাফিল খোকন নামে এক বাসচালক বলেন, ‘‘মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালানো নিষেধ। তবুও চালায়। আপনারা যেভাবে পারেন, এসব বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’’
আলাউদ্দিন নামে আরেক বাসচালক বলেন, ‘‘মহাসড়কে আমাদের সমস্যা সিএনজি অটোরিকশা, এরা রাতেও চালায়, দিনেও চালায়। অ্যাক্সিডেন্ট হয়, কেন হয়? এই সিএনজি, অটোরিকশা এগুলোর জন্য অ্যাক্সিডেন্ট হয় রাস্তায়।’’
মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে এটি বন্ধের দাবি তুলেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
ধামরাই সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন সজিব বলেন, ‘‘সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চালানো উচিত না। কারণ এই সিএনজি অটোরিকশার কারণে অনেক সময় অ্যাক্সিডেন্ট হয়। আর তাদের চালানো ভালো না। তারা বেপরোয়াভাবে চালায়, দেখা যায় হুট করে একটা বাসের সামনে চলে আসে। এজন্য অ্যাক্সিডেন্ট হয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতির কারণে এগুলো চলতে পারছে, না হয় এগুলো মহাসড়কে চলা সম্ভব হতো না। হাইওয়ে পুলিশের কাছে দাবি, তারা যেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।’’
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এগুলোর চালকদের কোনো লাইসেন্স নেই। তারা প্রশিক্ষিতও নন। ফলে অদক্ষ চালক ও মানহীন নিষিদ্ধ তিন চাকার যান মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে। এটি বন্ধে প্রশাসনের যেমন তৎপর থাকা উচিৎ। তেমনই জনগণেরও সচেতনতা দরকার।’’
এ বিষয়ে গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু বলেন, ‘‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমাদের গোলড়া হাইওয়ে থানায় ৫৫টা ফিডার রোড আছে। আমাদের যে জনবল আছে, আমরা সবসময় চেষ্টা করি, তিন চাকার যানবাহন যাতে মহাসড়কে চলাচল না করে। এজন্য আমরা প্রতিদিন ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি। অনেক সময় ডাম্পিংও করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি সবাই সচেতন হলে মহাসড়কে যান চলাচল আরও স্বাভাবিক হবে।’’
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে উঠতে পারবে না বলে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতের সে নির্দেশের পরেও এসব যানবাহনকে সবসময় চলাচল করতে দেখা যায় জাতীয় মহাসড়কে।