কুষ্টিয়ার মিরপুরে আহত অবস্থায় বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (২০মে) প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে বন্যপ্রাণীটি উপজেলা বন কর্মকর্তার হেফাজতে রয়েছে। এর আগে রবিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার সিংপুর গ্রামের থেকে আহত অবস্থায় গন্ধগোকুলটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় কৃষক উসমান গণি বলেন, “রবিবার রাত ১১টার দিকে আমার লিচু বাগানে অচেনা একটা প্রাণী দেখতে পেয়ে আটক করে নিয়ে আসি। স্থানীয়রা জানায় এটি বিপন্ন প্রাণী গন্ধগোকুল।”
পরে গন্ধগোকুলটিকে মিরপুর ইংলিশ ভার্সন স্কুলের (মেভস) অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মজিবুল হকের হাতে তুলে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, “রবিবার রাতে আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে ভেড়ামারা থেকে ফেরার পথে মিরপুর উপজেলার সিংপুর গ্রামে লোকজনের জটলা দেখতে পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একটি গন্ধগোকুলকে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে আহত গন্ধগোকুলটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।”
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রাণীটিকে উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাণীটি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। বেঁধে রাখার কারণে পেছনের দুই পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারছে না।
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এসএম মাহমুদুল হক বলেন, “সোমবার সকালে আহত অবস্থায় বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল নিয়ে আসা হয়। পরে প্রাণীটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার পেছনের দুটি পায়ে আঘাত পেয়েছে।”
মিরপুর উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, “মিরপুরে বিপন্ন প্রজাতির ছোট একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রবিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ধুবইল ইউনিয়নের সিংপুর এলাকার উৎসুক জনতার হাত থেকে গন্ধগোকুলটি আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।”
স্থানীয়দের বরাত দিতে এই বন কর্মকর্তা বলেন, “গন্ধগোকুলটি ফল খাওয়ার জন্য লিচু বাগানে গেলে জালে আটকে পড়ে।”
প্রাণীটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হলে এটি উপজেলা চত্বরের লিচু বাগানে অবমুক্ত করা হবে।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী তফসিল-১ ভুক্ত সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী এবং আইউসিএন এর তথ্য অনুযায়ী বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে গন্ধগোকুল অন্যতম।
জানা গেছে, স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল বর্তমানে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এদের ইংরেজি নাম (Asian Palm Civet); বৈজ্ঞানিক নাম (Paradoxurus Hermaphroditus)। এরা মূলত নিশাচর প্রাণী। এরা লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপ-জঙ্গলে বসবাস করতে পছন্দ করে। এরা রাতের বেলায় লোকালয় থেকে মুরগি, কবুতরের বাচ্চা, ফল, সবজি, তাল, খেজুর রস, কীটপতঙ্গ সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করে। গন্ধগোকুল ইঁদুর ও ফল ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে থাকে।