বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার তৈন রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ২০০টি সেগুনগাছ চুরি করে কেটে পাচারের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বন বিভাগের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃতরা হলেন- তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী, বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল ও বন প্রহরী অলক সেন।
এই ঘটনায় পাচার হওয়া কাঠ উদ্ধার করেছে র্যাব ও বন বিভাগ। রবিবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় এসব কাঠ উদ্ধার করা হয়। লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরিফুল হক বেলাল ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলীকদমের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে রোপিত সেগুনগাছ কেটে পাচার করা হয় বলে কিছুদিন আগে বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লামার মধুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান কালাম।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রেফারফাঁড়ি বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে কাঁকড়াঝিরি ও দুপ্রোঝিরি ম্রোপাড়া এলাকায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করে বিশাল বিশাল সেগুনগাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানা সত্ত্বেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
এতে আরও বলা হয়, তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলির প্রত্যক্ষ যোগসাজশে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের কাঁকড়াঝিরি ও দুপ্রোঝিরি এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশত বয়সী প্রায় তিন কোটি টাকার সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায় কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫৭ হাজার ১৮৪ একর আয়তনের তৈন রেঞ্জের কেয়াররাঝিরি, দুপ্রোঝিরি, বাগেরঝিরি, ওয়াকীঝিরি, কলারঝিরি, ভরিরমুখ, সোনাইছড়ি, পানের ছড়া, তৈনখালের আলীর পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকা কাঠ পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য। দীর্ঘদিন ধরে বনকর্তাদের যোগসাজশে সেগুন, গামারি, গোদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পাচার করা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তৈন রেঞ্জের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “কাঁকড়াঝিরি ও দুপ্রোঝিরির বনাঞ্চলের সেগুন গাছ চুরি করে কেটে পাচার হয়েছে ঠিক, কিন্তু আমি এ বিষয়টি জানতাম না। আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার।”
এদিকে গত রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে র্যাব ও বন বিভাগের লোকজন চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাজারসংলগ্ন সালাম কাউন্সিলরের মালিকানাধীন স’মিল থেকে ৮০০ ঘনফুট মূল্যবান সেগুন কাঠ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাছ তৈন রেঞ্জের আওতায় মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চুরি হওয়া কাঠ বলে শনাক্ত করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল জানান, গাছ চুরির ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী, বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল ও একজন বনপ্রহরীকে রেঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে সময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই চুরির ঘটনায় ৫টি মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।