ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (২৯ মে) সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই ১০৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ২২টি উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তাই ভোট নেওয়া হচ্ছে দেশের ৮৭টি উপজেলায়।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপের ভোটে ৮৭টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, চারজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন মিলিয়ে মোট এক হাজার ১৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৬টি পৌরসভা ও ৮৪১টি ইউনিয়নের ২ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৪৫০টি। নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২৯৯ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ২৯ হাজার ৯৫৮ জন, মোবাইল টিমে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৭ হাজার ৭৯৪ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৩ হাজার ৩৬৪ জন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৫৯ হাজার ২১৯ জন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাবের মোট ২৩০টি টিম মোতায়েন থাকবে। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৯ জন।
নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ মোট ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ এলাকার (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন আগ পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলার জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি ৩টি ইউনিয়নের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০টি উপজেলায় অতিরিক্ত ২৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১৮টি টিম, ১৯২ জন আনসার ও ৬৩ জন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোট (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬% ভোট পড়েছে। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২২ জন। ২১ মে এই ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৮ শতাংশ। প্রথম ধাপের রেকর্ডসংখ্যক কম ভোটের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কৃষকদের ধান কাটা ও বৃষ্টিসহ পাঁচটি কারণকে দায়ী করে পরের ধাপে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরের ধাপেও কাঙ্ক্ষিত ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় সরকারবিরোধী বিএনপির বর্জনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।