চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চকবাজার শাখার লকারে রাখা এক গ্রাহকের ১৪৯ ভরি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রাহকের অভিযোগ, স্বর্ণ গায়েবের ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা জড়িত।
তবে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরীর দাবী, গ্রাহক মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। লকার থেকে স্বর্ণ চুরি-ডাকাতি কিংবা গায়েব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শফিকুল মাওলা চৌধুরী বলেন, “আমরা গ্রাহককে বলেছি, এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আমার মনে হচ্ছে, স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগটি মিথ্যা। লকার থেকে স্বর্ণ চুরি-ডাকাতি কিংবা গায়েব হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। লকারে গ্রাহক কী রাখছেন তা জানার আমাদের সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “লকারে দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র না রাখার বিষয়ে আমরা ডিক্লারেশন নিয়ে থাকি। অন্য জিনিসের বিষয়ে ডিক্লারেশন নেওয়ার নিয়ম নেই। লকার সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।”
এর আগে পুলিশের একটু সূত্র জানায়, গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী লকারে প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণের গহনা রেখেছিলেন। ২৯ মে লকার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলে তিনি লকার রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় দেখতে পান যে, তার লকারটি খোলা এবং সেখানে কোনো গহনা নেই।
তখন রোকেয়া বলেন, “১৭ বছর ধরে আমি ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় লকার ব্যবহার এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছি। ২৯ মে দুপুর দেড়টার দিকে কিছু স্বর্ণালংকার আনতে ব্যাংকে যাই। সেখানে লকারের দায়িত্বে থাকা অফিসারকে লকার খুলে দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু লকার কক্ষের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই অফিসার আমার লকার খোলা দেখতে পান। এমন ঘটনা দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি।”
এ বিষয়ে শফিকুল মাওলা চৌধুরী বলেন, “লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। গ্রাহক যে লকার ব্যবহার করেন, তার একটি চাবি গ্রাহকের কাছেই গচ্ছিত থাকে। আরেকটি চাবি লকার ম্যানেজারের কাছে। ওই মাস্টার চাবি দিয়ে সব লকার খোলা যায়। এরপরও গ্রাহকের মৌখিক অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।”
গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারীর অভিযোগ সঠিক হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন কি-না জানতে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, “প্রত্যেক লকার ব্যবহারকারীর ইনস্যুরেন্স করা আছে। ইনস্যুরেন্স অনুযায়ী ছোট লকার ব্যবহারকারীরা এক লাখ টাকা, মাঝারি লকার ব্যবহারকারীরা দুই লাখ টাকা ও বড় লকার ব্যবহারকারীরা তিন লাখ টাকা করে ইনস্যুরেন্স থেকে পাবেন। গ্রাহক রোকেয়া মাঝারি আকারের লকার ব্যবহার করেন। তিনি দুই লাখ টাকা ইনস্যুরেন্স সুবিধা পাবেন।”
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক চকবাজার কাপাসগোলা শাখার ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “গ্রাহক চুক্তি মেনে লকারে কী রাখেন তা একান্ত তার মর্জি। লকারে স্বর্ণ, জমির দলিলপত্র নাকি অন্য কিছু রাখছেন তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতেও বাধ্য নন গ্রাহক। আবার গ্রাহক কী রাখছেন তা জানাতে হবে সে সম্পর্কে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা নেই। লকারের দুটি চাবি থাকে। একটি থাকে গ্রাহকের কাছে অপর চাবি থাকে লকার ম্যানেজারের কাছে। তবে লকারে রাখা আমানত খোয়া গেলে ইনস্যুরেন্স বাবদ কত টাকা পাবেন তা আমার জানা নেই।”
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডক্টর জায়েদ বখত বলেন, “ব্যাংকের স্বর্ণালংকার রাখলে সেটি চুরি বা ডাকাতি হলে সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দায় নিতে চায় না। তবে স্বর্ণালংকারের ইনস্যুরেন্স করা থাকলে সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।”
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, “বিষয়টি ২৯ মে আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন স্বর্ণের মালিক। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত ব্যাংকের লোকজন কিংবা ভুক্তভোগী থানায় মামলা করতে আসেননি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”