নড়াইলে চলছে ঐতিহ্যবাহী সুলতান মেলা। প্রতিবছরই এই উৎসব ঘিরে নড়াইল ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে থাকে তীব্র উত্তেজনা। সুলতান মেলারই একটি অংশ ষাঁড়ের লড়াই। স্থানীয়ভাবে এটি 'এঁড়ে লড়াই' নামে বেশি পরিচিত। দৈত্যাকার সব ষাঁড়ের লড়াই দেখতে মেলায় ছুটে আসে মানুষজন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়ির ডোপ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের সুলতান মেলার 'এঁড়ে লড়াই'। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
জমজমাট এ ষাঁড়ের লড়াই দেখতে ভিড় করে নড়াইলসহ খুলনা,মাগুরা ও যশোরের কয়েক হাজার মানুষ। নড়াইল ছাড়াও আশেপাশের যশোর,মাগুরা ও গোপালগঞ্জ থেকে থেকে আসা অর্ধশতাধিক ষাঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। শুরু হয় দফায় দফায় লড়াই। এ সময় মাঠের চারপাশে চলতে থাকে উৎসুক দর্শকদের উল্লাস।
আজ সকাল থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে লড়াই দেখার জন্য আসতে থাকেন উৎসুক লোকজন। খেলার আগ্রহে কেউ কেউ আবার দুপুরে না খেয়েই হাজির হন মাঠে। দুপুর ১টায় লড়াই শুরু হওয়ার আগেই দর্শক মাঠের কানায় ভরে যায়।
দু-পক্ষের লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী ষাঁড় যেন ভয় না পায় সেজন্য প্রতিটি দলেই একজন করে গুনীন থাকেন। তিনি লড়াই চলাকালে মাটিতে জোরে হাত দিয়ে চাপড়াতে থাকেন। এভাবে চলতে থাকে লড়াই। মাঝে মধ্যেই প্রতিপক্ষ ষাঁড়ের ভয়ে ভীত হয়ে অনেক ষাঁড় এলোমেলো দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় দর্শকদের মধ্যে ঢুকে যায় ষাঁড়। এতে আহত হন অনেকেই। এভাবেই উত্তেজনা আর ভয় নিয়ে দর্শকেরা হাজার বছরের এই ঐতিহ্যবাহী লড়াই উপভোগ করেন ।
যশোরের বসুন্দিয়া থেকে আসা ইমরান মোল্যা বলেন, 'সুলতান মেলার ষাঁড়ের লড়াই দেখতে ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। সারাদিন লড়াই দেখবো এরপর বাড়ি যাবো। যেখানে এঁড়ে লড়াই হয় সেখানেই ছুটে যাই। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি কবে সুলতান মেলা হবে, আর এই খেলা দেখতে পারবো।'
লড়াই শেষে আজ বিকালে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে মাগুরার কিংকরের ষাঁড়, দ্বিতীয় হয়েছে যশোরের শংকরপাশার জনি ফারাজীর ষাঁড় এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে বরনি এলাকার সারোয়ারের ষাড়। বিজয়ীদের পুরস্কারের নগদ অর্থ এবং উপহার দেওয়া হয়।
সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমাম মিকু বলেন, 'শিল্পী সুলতান গ্রাম বাংলার আবহমান জীবন নিয়েই তার শিল্প তুলে ধরেছেন। আমরা চাই গ্রামীণ এসব খেলাধুলা টিকিয়ে রেখে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে।'
বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ৩ মার্চ থেকে নড়াইলে ১০ দিনব্যাপী ‘সুলতান মেলা’ শুরু হয়েছে। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ চত্বরে জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ মেলার উদ্ধোধন করেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া।