খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসির বাসভবনে দেওয়া তালা ৭৫ ঘণ্টা পর ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর বাসভবনে প্রবেশ করেন ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে যান এবং তালা ভাঙা ও ভেতরে ভিসিসহ বেশ কয়েকজনকে দেখতে পান। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসিকে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বাসভবন ত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “তালা ভেঙে ভিসির বাসভবনে প্রবেশের খবর পেয়ে আমরা রাত ১১টার দিকে সেখানে যাই। কিন্তু তালা কে ভাঙলো তা জানতে পারিনি। তাৎক্ষণিক ভিসিকে বাসভবন ত্যাগ করার আহ্বান জানাই। কিন্তু তিনি অসুস্থ বলে জানান। তাই তাকে বাসভবন ছাড়ার জন্য সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, “গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ছাত্রদল এবং বিএনপির সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতি, রামদা, পিস্তল দিয়ে হামলা চালায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কুয়েটের সকল শিক্ষার্থী ৬ দফা দাবি উত্থাপন করি। আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের সকল দাবি পূরণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বারংবার মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় কুয়েট শিক্ষার্থীরা ভিসিকে বর্জন করেন।”
এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সকল শিক্ষার্থী মিলে ভিসির বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, মাসুদ স্যার আমাদের ভিসি না, আমরা মাসুদ স্যারকে ভিসি হিসেবে বর্জন করেছি। তাই মাসুদ স্যার ভিসির বাসভবনে ঢুকতে পারবেন না। ভিসি বাসভবনে যারা অবস্থান করছেন, তাদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে। এরপর বাসভবনে আবার তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। মাসুদ স্যারের কোনো অধিকার নেই বাসভবনে থাকার। আমরা শিক্ষার্থীরা কুয়েটের নতুন ভিসির জন্য ভিসি বাসভবন সংরক্ষণ করবো। এর আগে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এখানে তালা দিয়ে রাখবে।”
শিক্ষার্থীরা বলেন, “যেহেতু আমরা ভিসিকে বর্জন করেছি, সেহেতু এই ভিসির নিয়োগকৃত তদন্ত কমিটিকে আমরা কেউ গ্রহণ করছি না। এখানে ভিসি তার আস্থাভাজন, আমাদের আন্দোলনে বিতর্কিত শিক্ষকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই তদন্ত কমিটিকে আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি এবং এই কমিটির অধীনে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমরা কখনোই মেনে নেবো না। আমরা আমাদের নতুন অভিভাবকের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য অপেক্ষা করছি।”
তালা ভাঙা প্রসঙ্গে কুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “চিকিৎসা শেষে রাতে বাসভবনে আসি। এখানে গেট খোলাই ছিল, ভেতরে প্রবেশ করি। আমার কাছে ছাত্ররা আসেনি। তবে শোনা যাচ্ছে ছাত্ররা বাসভবন ছেড়ে দিতে বলছে। আমাকে সরাসরি কেউ কিছু বলেনি।”
তিনি আরও জানান, তাকে অফিস করতে হবে। তিনি বাসভবনেই থাকবেন এবং অফিসও করবেন।
এদিকে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির নির্ধারিত তিন কার্যদিবস পার হয়েছে। কিন্তু সব অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত তিন দিনে তদন্তকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি কুয়েট প্রশাসনের কাছে আরও সাত দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে কমিটি। গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি ও কুয়েট কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এম. এ. হাসেম সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এ আবেদন করেন।