খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের দাবী হলের ওয়াইফাই ও পানির লাইন বন্ধ করা হচ্ছে ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ তারা হল ছাড়ছেন। ক্যাম্পাস চালু হলে তারা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করে জানাবেন।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার সময় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় কুয়েটের হল ও একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাতে কুয়েট শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে ও হলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালেও শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন। তবে দুপুরের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে হল ছাড়তে শুরু করেন।
কুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, “হল ভ্যাকান্ট ঘোষণার পরও যারা রয়ে গেছে প্রোভোস্ট ও শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর সুফলও মিলছে।”
কুয়েটের উপ উপাচার্য প্রফেসর শেখ শরিফুল আলম জানান, ছেলেরা হল ছাড়ছে। কিছু ছেলে টিউশনি, থিসিসসহ ব্যক্তিগত কারণে দুই একদিনের জন্য থাকলেও হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলে থাকছে। আর ছাত্রদের দাবী দাওয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একমত। যেটুকু সমস্যা আছে সেটি নিরসনে কাজ চলছে। ওয়াইফাই ও পানি বন্ধের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি এগুলো দেখবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীরা জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে ৭টি আবাসিক হলে থাকা ২,৮০০ শিক্ষার্থীর ৮৫% হল ছেড়ে নিরাপদে চলে যায়। ২০০-২৫০ জন শিক্ষার্থী ৭টি হলে অবস্থান করছিল। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আবারও সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদের হল ত্যাগ ও পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে স্বল্প পরিসরে থাকা শিক্ষার্থীরাও হল ছাড়তে শুরু করে। আন্দোলনে থাকা কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকতে চায়। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এক ঘণ্টা পর পানি সরবরাহ ঠিক হয় বলে তারা জানান।
কুয়েট ড. এসএম রশিদ হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কৌশল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলোর ইন্টারনেট সংযোগ ও পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেয়।”
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের পরিবর্তন চান তারা। এই দাবিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে। এরপর ধীরে ধীরে হল ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি দুটি বাসে করে ৮০ জন শিক্ষার্থী ঢাকার শহিদ মিনারে অবস্থান নেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রদান করেন।
কুয়েটের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা ভিসিকে বর্জন করেছি। আর যেহেতু আমরা ভিসিকে বর্জনের ঘোষণা করেছি সেহেতু উনার আন্ডারে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিচ্ছি না। উনি আমাদের তিন ঘণ্টা যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।”
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে কি না এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রদল সমর্থিতরা বহিরাগতদের নিয়ে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে ৬ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ওই দিনই কুয়েটের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ৫টি দাবি মেনে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানসহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।