প্রডাকশন বেইজড শ্রমিকদের কাজের মজুরি বৃদ্ধি, আইন অনুযায়ী ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ফলে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলরাত যাত্রী ও পথচারীরা।
সোমবার (৩ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে সাভারের উলাইলে “ডায়নামিক সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড” কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রায় ৩০ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। তবে এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকদের একটি অংশ মহাসড়কের পাশের একটি কারখানায় (আনলিমা টেক্সটাইল লিমিটেড) ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়ায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এ সময় হামলাকারী দুইজন নারী শ্রমিককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে আনলিমা টেক্সটাইলের লোকজন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, সোয়েটার কারখানাটিতে অধিকাংশ শ্রমিক প্রোডাকশন বেইজড কাজ করেন। মালিকপক্ষ সম্প্রতি কোনো নোটিশ ছাড়াই প্রতি পিস কাজের বিপরীতে শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে দেয়। এছাড়াও নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস দেয় না কারখানাটি। এসব দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা মালিকের সঙ্গে কথা বলার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। সোমবার সকাল ৮টার দিকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ধারণ করলেও সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে দেখেন কারখানা বন্ধ। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানা সংলগ্ন আঞ্চলিক সড়ক ও পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
আকলিমা নামে কারখানাটির একজন লিংকিং অপারেটর বলেন, “আগে যেই কাজের মজুরি ২৬ টাকা দেওয়া হতো, এখন সেটিতে দেওয়া হয় ২১ টাকা। পিস প্রতি যেই কাজের জন্য ২৩ টাকা রেট ছিল, সেটি এখন ১৬ টাকা। দিনে দিনে কাজের রেট বাড়ে, কিন্তু আমাদের কারখানায় রেট কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাসও নিয়মানুযায়ী না দিয়ে তুলনামূলক কম দেওয়া হয় আমাদের। এসব বিষয়ে আমরা বারবার মালিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম, কিন্তু মালিক কথা বলছে না। আজ সকালে আলোচনা বলার কথা বলে কারখানা দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। বাধ্য হয়ে দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছি আমরা।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীসহ আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করলে ৩ মালিকপক্ষ অঙ্গিকার করেন যে, তারা শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে আলোচনায় বসবেন। এই অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সড়ে যান।”
আগামীকাল দুপুর ২টায় শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।