জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যে দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে, তা লাঘব করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জাবি ক্যাম্পাসটি ৭০০ একর বিস্তৃত হওয়ায় আবাসিক হল থেকে একাডেমিক ভবনে হেঁটে ক্লাশ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। বর্তমানে ক্যাম্পাসে প্যাডেলচালিত রিকশা থাকলেও তা সংখ্যা ও খরচের দিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী নয়। এ কারণে বিকল্প ও টেকসই সমাধান হিসেবে পরিবেশবান্ধব “কার্ট গাড়ি” চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান।
ঘন ঘন দূর্ঘটনার কারণে বন্ধ হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা
গতবছরের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান।
এর আগে, ২০২২ সালে সাংবাদিকতা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী পূজা মজুমদার অটোরিকশা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাগামহীন গতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হরহামেশাই দূর্ঘটনার খবর পাওয়া যেত।
এদিকে, আফসানার মৃত্যুর পর নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করে। পরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে শাটল বাস চালু করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ছিল। বিকল্প হিসেবে কিছু প্যাডেলচালিত রিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়, কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় কম।
অটোরিকশা বন্ধে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
সাত’শ একরের এ ক্যাম্পাসে চলাচলের প্রধান মাধ্যম ছিল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গত তিনমাস যাবত ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ থাকা ও প্যাডেল রিকশার সংখ্যা কম হওয়ায় ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়াও প্যাডেলচালিত রিকশায় ভাড়া বেশি, ধীরগতি, এবং উঁচু রাস্তায় চলাচলের সমস্যাও রয়েছে
অন্যদিকে, শাটল বাস চালু করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়, ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘপথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। বিশেষ করে শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও বেশি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সালাউদ্দিন বলেন, “ক্যাম্পাসে যাদের বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল আছে, তাদের তেমন অসুবিধা হচ্ছে না, কিন্তু যাদের এসব নেই, তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমাদের দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেকসময় রিকশা পাওয়া যায় না। ক্লাস- পরীক্ষায় দেরি হয়, সময় অপচয় হয়। শুনেছি প্রশাসন কার্ট গাড়ি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
কবে থেকে চালু হচ্ছে ইলেকট্রনিক কার্ট?
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, মার্চ মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে কার্টভ্যান চালু করা হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিচালিত ও পরিবেশবান্ধব ১২ আসনবিশিষ্ট ফোর-হুইলার এই ইলেকট্রিক গাড়িগুলো শিগগিরই ক্যাম্পাসে চলা শুরু করবে। আমরা ১৫ মার্চ থেকে প্রথমে ৫টি গাড়ি দিয়ে আমাদের শাটল বাস সার্ভিস শুরু করতে পারব বলে আশা রাখছি। ধীরে ধীরে বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হলগুলো থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে এবং লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেবে। এই বাস সার্ভিস সম্পূর্ণভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন করব।”
তিনি আরও বলেন, “কার্টগুলো দেখতে অনেকটা গলফ কার্টের মতো হলেও আকারে বড় এবং পরিবহণ ও টহল কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় এটি পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি-সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক কম খরচে পরিচালনা করা সম্ভব। এছাড়া দ্রুত চার্জ হওয়ার কারণে দীর্ঘ পথ চলতেও কোনো সমস্যা হয় না।”