রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানো বিধানের বৈধ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে আট সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিষয়ে যুক্ত করা বিধান কেন ১৯৭২ সালের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে প্রধান বিচারপতিকে শপথ পাঠ করাতেন রাষ্ট্রপতি, আর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠ করানোর বিধানে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন স্পিকার, সেই বিধান ফিরিয়ে আনা হয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত আজ রুল জারি করেছেন।”
এর আগে, সোমবার কবি-গীতিকার, প্রাবন্ধিক-কলামিস্ট শহীদুল্লাহ ফরায়েজী এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদেনে একটি জাতীয় দৈনিকে “রাষ্ট্রপতির শপথে প্রধান বিচারপতির অনিবার্যতা” শীর্ষক প্রকাশিত একটি কলামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেটি লিখেছেন রিটকারী শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
ওই কলামের একটি অংশে বলা হয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান সেই দেশের প্রধান বিচারপতি। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির দেশেও রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির নিকট।
এটা বিশ্বব্যাপী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজ। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রের প্রধানের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট করা। এতে সংবিধানের গভীর দার্শনিক ভিত্তি থেকে রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে প্রধান বিচারপতির নিকট শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক নির্দেশনা।