বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২৮৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও হামলায় মদদের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান এসব তথ্য সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। প্রায় ১৫ ঘন্টা ধরে চলে এ সভা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ৩টি ক্যাটাগরিতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাময়িক বরখাস্ত, পরীক্ষা শেষ হয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের ফলাফল স্থগিত, সাবেক শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিত।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৮৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও একটি অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে, যাদের ছাত্রত্ব শেষ তাদের সনদ স্থগিত করা হবে, যারা পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়েছে তাদের ফলাফল স্থগিত করা হবে এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষক সাময়িক বহিষ্কার
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদের অভিযোগে ৯ জন শিক্ষককে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৯ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আরও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
এছাড়া সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক তদন্তে আরও ১০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে অনুষদভিত্তিক ছয়টি স্ট্রাকচারাল কমিটি করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ২ জন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
হলের নাম পরিবর্তন
এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নামে থাকা বেশকিছু স্থাপনার নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ রাসেল হল এবং শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে নতুন নামকরণের বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫ জুলাইয়ের রাত জাবিতে কালোরাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।