রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় এক বাবাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে মহানগরীর তালাইমারি শহিদ মিনার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- তালাইমারী শহিদ মিনার এলাকার বাসিন্দা মো. নান্টু (২৮), একই এলাকার মো. বিশাল (২৮), খোকন মিয়া (২৮), তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।
স্বজনরা জানান, বুধবার রাতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আকরাম আলী (৪৫) ও তার ছেলে ইমাম হোসেনকে মারধর করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর আকরাম আলী মারা যান। পরের দিন বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী শহিদ মিনার এলাকায় নিহতের মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফাঁসির দাবি করা হয়।
আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি তাদের বিচার চাই, ওদের ফাঁসি হোক। ওরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে। ঘটনার পরে তাদের এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।”
আকরামে স্ত্রী ও তার মেয়ে বলেন, “তারা দীর্ঘদিন হতে আমাকে উক্ত্যক্ত করে আসছিল। সর্বশেষ তারা আমাকে অশ্লীলভাবে গালি দেয়। আমি বিষয়টি বাড়িতে এসে বাবা-মাকে বলি। বাবা তাদের পরিবারকে সেটা বলতে গিয়েছিল। এতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাবাকে রাস্তায় ঘিরে ফেলে মারধর ও ইট দিয়ে আঘাত করে। এতে আমার বাবা মারা যায়। আমাদের একটাই দাবি তাদের ফাঁসি হোক। আমার আর কোনো দাবি দিতে চাই না।”
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত আকরামের মেয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবার নিথর দেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হয় সে। হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ১০টার দিকে। আর ঠিক পরদিন, বৃহস্পতিবার সকালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায় তার মেয়ে। বৃহস্পতিবার ছিল ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা। সে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী।
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আলফি খুবই মেধাবী ছাত্রী। তার বাবাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”