সাধারণত যেকোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রায় সব সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়। কিন্তু তাতে শিরোনামে থাকে ভিন্নতা, পাশাপাশি প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদক-সম্পাদক চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব তথ্য সংযুক্ত করার। তবে এবার ময়মনসিংহে একই সংবাদ একই শিরোনামে ১৩টি আঞ্চলিক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় লাগাতারভাবে প্রকাশ করায় আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তাবে তার চেয়ে বেশি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এ ঘটনায় ওই ১৩ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায়।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকদের নামে নোটিশ জারি করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
নোটিশপ্রাপ্ত পত্রিকাগুলো হলো- শামসুল আলম খান সম্পাদিত দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ, এফ এম এ ছালাম সম্পাদিত দৈনিক দেশের খবর, এন বি এম ইব্রাহীম খলিল রহিম সম্পাদিত দৈনিক বিশ্বের মুখপাত্র, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার সম্পাদিত দৈনিক ঈশিকা, নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত দৈনিক অদম্য বাংলা, আফসার উদ্দিন সম্পাদিত দৈনিক সবুজ, আ ন ম ফারুক সম্পাদিত দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দৈনিক দিগন্ত বাংলা, শেখ মেহেদী হাসান নাদিম প্রকাশিত দৈনিক জাহান, ওমর ফারুক সম্পাদিত দৈনিক কৃষাণের দেশ, এম এ মতিন সম্পাদিত দৈনিক নিউ টাইমস, ফরিদা ইয়াসমীন রত্না সম্পাদিত হৃদয়ে বাংলাদেশ ও বিকাশ রায় সম্পাদিত সাপ্তাহিক পরিধি।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, পত্রিকাগুলো ভিন্ন হলেও এবছরের ৩০ মার্চ, ৭, ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ এপ্রিল একই সংবাদ, একই শিরোনামে প্রকাশ করে।
এসব পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকদের নোটিশ জারির দিন থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে একই সংবাদ, একই শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
তবে ১৩ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের ঘটনায় সাংবাদিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে আলোকিত ময়মনসিংহ পত্রিকার সম্পাদক ও ময়মনসিংহ সংবাদপত্র শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ফারুক বলেন, “এরকম সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর মতো ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। তবে সম্পাদকদের ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিলেই সবচেয়ে বেশি ভালো হতো।”
ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে এ বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন তিনি।
আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “একই শিরোনামের সংবাদ একই ছাপাখানা থেকে একাধিক পত্রিকায় একাধারে কয়েকদিন প্রকাশিত হবে এটা পাবলিকেশন অ্যাক্ট পরিপন্থি। সংবাদপত্রের মান ধরে রাখতে এ বিষয়ে সবাকেই সচেতন হওয়া উচিত।”
এর আগেও এই সমস্যাগুলো নিয়ে সম্পাদকদের মধ্যে কথা হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের নোটিশ কখনও তারা পাননি বলে জানান অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক।
ময়মনসিংহ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম উজ্জ্বল বলেন, “ময়মনসিংহে একই ছাপাখানা থেকে ১০-১২টি পত্রিকা ছাপা হয়ে থাকে। একজন রিপোর্টার এসব পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ করেন। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন, তথ্য অফিস ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি করা উচিত। দুই মাস তিন মাস পর পর মনিটরিং করা হলে এরকম অনিয়ম কখনও হবে না।”
ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, “একই শিরোনাম কয়েকটি পত্রিকায় একাধারে একই বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হবে- এটা সংবাদপত্রের মূলনীতি পরিপন্থি। সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষ সঠিক তথ্য পাবে। পত্রিকাগুলো অবশ্যই নিয়মের মধ্যে আসা উচিত।”
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “একই শিরোনাম একাধিক পত্রিকায় একাধারে ছাপা হওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর পত্রিকার সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে সম্পাদকরা এসে কেন এমন ঘটনা ঘটলো বিষয়টি অবহিত করলেই হবে।”
