Wednesday, July 09, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

খুলনায় খুন-লাশ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে, জনমনে আতঙ্ক

গত ৪৭ দিনে খুলনায় ১৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ১১:০৮ এএম

খুলনায় নদ-নদী থেকে একের পর এক অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। অধিকাংশ লাশের হাতের টিস্যু পচে যাওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ। ফলে এসব লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হচ্ছে।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুসারে, গত ৪৭ দিনে খুলনায় ১৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে নদী থেকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌ-পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর অভিযানও চলছে। অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী, তাদের সহযোগী এবং কথিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা ধরা পড়লেও থামছে না হত্যার ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে খুলনার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

গত ৯ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদী থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদ-সংলগ্ন নদীতে কচুরিপানার মধ্যে লাশটি ভেসে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়।

নৌ-পুলিশ রূপসার ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পাইকগাছা নৌ-ফাঁড়ির আওতায় পড়লেও এখনও পর্যন্ত নিহতের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। সিআইডি ও পিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে গেলেও হাতের টিস্যু পচে যাওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

তার আগে ৮ জুন দুপুরে শ্রীফলতলা গ্রামের দাউদ মার্কেটের পাশের কলাবাগান থেকে ভ্যানচালক রবিউল মোল্লার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সেই দিন সকালেই রূপসা উপজেলার আইচগাতি উত্তরপাড়ায় প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জান্নাত (২৩) শ্বাসরোধে খুন হন। রাতের কোনো একসময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

৪ জুন সকালে সদর থানার মতিয়াখালী স্লুইচগেট খালে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে নৌ-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে, ২ জুন দিবাগত রাতে ময়লাপোতা হরিজন কলোনিতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবক নিহত হন।

সদর নৌ-পুলিশের ওসি বাবুল আক্তার জানান, ৪ জুন অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরে লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। এখন একজন এসে ওই লাশ তার আত্মীয়ের দাবি করায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের প্রক্রিয়া চলছে।

এছাড়া, গত ১০ মে বিকালে খানজাহান আলী থানার ভৈরব নদ থেকে অজ্ঞাত (৪০) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১১ মে রাতে হিরনের ঘাট এলাকা থেকে আরও এক অজ্ঞাতনামা (৪২) ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার বিষয়ে রূপসা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল খায়ের জানান, রাত ৮টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

৭ মে হরিণটানায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর নির্যাতনে জান্নাতি আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। ২৩ মে ভোরে লবণচরা থানাধীন শিপইয়ার্ড মেইন রোডে মোশারফের বাড়ির পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত আরও এক এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ নিশ্চিত করে, মৃত ব্যক্তির নাম নাঈম মোল্লা।

২৬ মে রাতে রূপসা উপজেলার মোছাব্বরপুর গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কালো রনি (৩৬) নামে এক যুবক নিহত হন। একই রাতে সোনাডাঙ্গা ২২ তলা এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন গোলাম (২৫)। ১৭ মে দুপুরে মীরেরডাঙ্গা খেয়াঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত কিশোরের লাশ।

২৯ মে খালিশপুর থানাধীন ৬ নম্বর মাছ ঘাট এলাকা থেকে আরও একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের পরনে ছিল নীল রঙের গেঞ্জি ও কালো প্যান্ট। পচে যাওয়া মুখ ও হাতের কারণে পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

২৭ মে কয়রা নদীর চর থেকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আব্দুল মজিদ সানার (৬০) লাশ উদ্ধার হয়। ২২ মে টুটপাড়া দারোগার বস্তির একতলা ভবন থেকে নিলু বেগম (৫৬) নামের এক নারীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এলাকাবাসীর ধারণা, লুটেরারাই তাকে হত্যা করেছে।

২৩ মে রূপসায় স্ত্রীর প্রেমের ঘটনায় প্রতিবেশী আবদার শেখকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেন স্বামী মনি শেখ। ওই ঘটনায় স্ত্রী তানজিলাও গুরুতর জখম হন। ৩১ মে কয়রায় পারিবারিক কলহের জেরে ছোট ভাইকে হত্যা করে বড় ভাই শহীদুল গাজী গ্রেপ্তার হন।

সার্বিক বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহকারী কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) খোন্দকার হোসেন আহমদ ইউএনবিকে বলেন, “খুলনায় প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে এবং আসামিরাও গ্রেপ্তার হচ্ছে। শহরে টহল টিম, সিটিএসবি ও ডিবি সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে সুধী সমাবেশও করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

   
Banner

About

Popular Links

x