খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘আমিও মনে করি কৃষক সবসময় বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি সবার সাথে একমত যে, এই মুহূর্তে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হলে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে’
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নতুন দারিদ্র সৃষ্টি রোধ করতে কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি কৃষিখাতের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট আরও বৃদ্ধি করার সুপারিশও করেন তারা।
গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের আয়োজনে “করোনায় কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা: প্রসঙ্গ জাতীয় বাজেট ২০২০-২১” শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে বক্তরা সরকারকে এ পরামর্শ দেন।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) সভাপতি ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
এছাড়া অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা সেমিনারে যুক্ত ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ ও সঞ্চালনা করেন কৃষি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রেজাউল করিম সিদ্দিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, “এই দুর্দিনে আমার একমাত্র আশ্বস্ত হওয়ার জায়গা ছিল কৃষি। প্রধানমন্ত্রীও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এই খাতে। আমিও মনে করি কৃষক সবসময় বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি সবার সাথে একমত যে, এই মুহূর্তে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হলে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে। কৃষকের নায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটাও অনেকটা সত্যি, বিশেষ করে সবজিচাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে কৃষিপণ্য পরিবহন নিয়ে এরই মধ্যে বিআরটিসি ও ডাক বিভাগের গাড়িগুলোকে প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্দেশ্যে ধান রোপণের পরপরই তালিকা তৈরি করে ফেলা। কারণ ধান বিক্রির সময়ে আমরা কৃষকের তালিকা সঠিক সময়ে হাতে পাচ্ছি না।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বলেন, “করোনা পরিস্থিতি আমাদের বাজারব্যবস্থা, কৃষক ও ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বড় একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। আমরা এখান থেকে অনেক শিক্ষা নিতে পারি। তবে কৃষকের জন্য আমরা যদি কোনোভাবে কৃষি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে পারি, এবং শুরুতে যে কতগুলো ফসল নিয়ে কাজ করা যায় সেগুলো নিয়েও কাজ করতে পারি তাহলে ভালো কিছু হতে পারে।”
অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, “কৃষককে ক্যাশ সাপোর্ট (নগদ অর্থ সহায়তা) দিতে হবে। তা না হলে বীজ, সার, অন্যান্য জিনিস কৃষক সময়মতো কিনতে পারবে না। বাজারব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। ভোক্তা ও উৎপাদকের মধ্যে সরাসরি সংযোগ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। তার মাধ্যমে দুজনেই সঠিক মূল্য অর্জন করতে পারবে। যদিও এ সংক্রান্ত আমাদের কোনোরকম অবকাঠামো নেই।”
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, “করোনাকালীন সময়ে কৃষিপণ্য বাজারজাত করণে যে ইনোভেশানগুলা এসেছে সেগুলোকে সম্প্রসারণ করতে হবে। সেই সাথে সরকার প্রণোদনা দিয়ে অনলাইন কৃষি বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। সরকারকে কৃষি মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।”
এছাড়া আলোচকরা, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, ধান-চাল ক্রয়ে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করতে কৃষকের হাতে সরাসরি নগদ অর্থে প্রণোদনা দেওয়া, বর্গাচাষিদের ঋণ সুবিধার আনার জন্য নীতিমালা প্রনয়ন করা, কৃষিযন্ত্র উৎপাদনে দেশীয় উৎপাদকদের প্রণোদনা দেওয়া জন্য বরাদ্দ রাখা এবং পারিবারিক কৃষির প্রসারে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের আয়োজিত এই অনলাইন সেমিনারে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রান্তিক কৃষক, কৃষি সংগঠক, কৃষিবিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
মতামত দিন