দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও নওগাঁর আত্রাইয়ের মৃৎ শিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের
নওগাঁ জেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা আত্রাই উপজেলার রায়পুর ও ভবানীপুর পালপাড়া মৃৎ শিল্পের কারণে যেন শিল্পীর তুলিতে আকাঁ একটি স্বর্ণালী ছবি। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকটের মুখে পড়েছে শিল্পটি। তারপরও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে অনেকেই।
আত্রাই উপজেলার রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎ শিল্পীদের বাসস্থান। এক সময় এ গ্রামগুলো মৃৎ শিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসকারী মৃৎ শিল্পীদের অধিকাংশই পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎ শিল্পে শ্রেশিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎ শিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজষপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। সে কারণে অনেক পুরোনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎ শিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও আত্রাইয়ের মৃৎ শিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার রায়পুর গ্রামের বিপ্লব কুমার পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রেখেছি। আত্রাইসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে এই মৃৎ শিল্পটি।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলাম বলেন, “আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মৃৎশিল্পের বিদেশে বাজার তৈরি করা সম্ভব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃৎশিল্পের প্রসারে জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।”
মতামত দিন