স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ চক্রটি কারখানা থেকে কম দামে চা পাতা কিনে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন নামে মোড়কজাত করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে
পঞ্চগড়ের কয়েকটি চা কারখানার বিরুদ্ধে অতিমুনাফা তুলে নিতে সরাসরি বাগান থেকে চা পাতা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে নিলাম থেকে চা ক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি এসব কারখানা থেকে কম দামে চা পাতা কিনে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন নামে মোড়কজাত করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। এতে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা আর প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এমনই অভিযোগের মধ্যে গত সোমবার পঞ্চগড়ের ১৩টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে প্যাকেটজাত ৫৫ বস্তা চা পাতা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর সময় আটক করেছেন পঞ্চগড় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিস।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেরাব আলীর নেতৃত্বে পঞ্চগড় সার্কেল অফিসের কর্মকর্তারা সোমবার (৪ জানুয়ারি) রাতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস হতে এসব চা পাতা আটক করেন। আটককৃত ওই চা প্যাকেটজাত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- হিমালয় কন্যা টি, মেসার্স ফারুক ট্রেডার্স, মেঘনা টি হাউস, সতেজ গার্ডেন টি, সকাল সন্ধ্যা টি হাউস, উৎসর্গ টি কোম্পানি লিমিটেড, আল হিকমা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সাদিয়া টি হাউস, মিরপুর টি হাউস, নাজমুল ফুড প্রোডাক্টস, শৈশব টি হাউস, ডা. মফিজ টি সাপ্লাই ও তানভির টি হাউস।
পঞ্চগড় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেরাব আলী জানান, প্রতি কেজি চা পাতার মূল্যের উপর ১৫% ভ্যাট প্রদান করে চা পাতার ব্যাবসা করার নিয়ম থাকলেও চা পাতা প্যাকেজিং মালিকরা এ নিয়ম না মেনে চা পাতা বিক্রি করায় তা আটক করা হয়েছে। ২০১২ সালের ভ্যাট ও সম্পূরক আইনের বিধি ১৬ অনুযায়ী এসব চা পাতা প্যাকেটজাত মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বর্তমানে চা পাতার প্যাকেটের এসব বস্তা কাস্টমস অফিসে জমা রয়েছে। ভ্যাট না দিয়ে চা পাতার ব্যাবসায়ীরা চা পাতা অন্য জেলায় পাঠাতে না পারে এ জন্য তারা তৎপর রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড়ের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, “বৈধ পথে চা বিক্রির মাধ্যমে চা উৎপাদন খাতে সরকার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় করতে পারবে। বাগান মালিকরা বিভিন্ন সময় অবৈধ উপায়ে বাগান থেকেই চা পাতা বিক্রি করছেন বলে শুনেছি। কিন্তু সরাসরি প্রমাণ না পাওয়ায় চা বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ”
তিনি বলেন, “চা কারখানাগুলো যে পরিমাণ উৎপাদন করে তার মাসিক রিপোর্ট আমাদের কাছে সরবরাহ করেন তা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করি। স্থানীয়ভাবে কেউ চা বিক্রি করতে পারেন না, কেউ বিক্রি করতে চাইলে চা বোর্ডের কাছে পূর্বানুমতি নিতে হবে এবং মোট উৎপাদনের ২৫% বেশি বিক্রি করতে পারবে না। অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করতে না পারে এ জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।”
মতামত দিন