স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০তম বাজেট ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকাল ৩টায়। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, আসন্ন বাজেটে করোনাভাইরাস পরবর্তী স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতির পরিস্থিতির ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে। যদিও এতে মধ্যবিত্তদের জন্য কোনপ্রকার প্রণোদনা বরাদ্দ নেই। নতুন বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের আকাঙক্ষার বিষয়গুলো উঠে এসেছে ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের আহ্বান জানিয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে মধ্যবিত্তদের অবস্থান সুরক্ষিত করা না হলে মহামারি পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
তাদের মতে, মানুষের মধ্যে শ্রেণি বৈষম্য কমানো এবারের বাজেটের একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কেননা মহামারির ধাক্কায় দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অনুসারে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি। যার মধ্যে ৪ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্গত, যা কি না মোট জনসংখ্যার ২৫%। মধ্যবিত্ত হচ্ছে সেই শ্রেণির মানুষ যারা নির্দিষ্ট একটি মাসিক বেতনে কাজ করেন, এর বাইরে কোনও বাড়তি আয়ের সুযোগ নেই কিন্তু দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর একটি জরিপ অনুযায়ী, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ৬২% মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে।
অন্যদিকে, অর্থনৈতিক মডেলিংয়ের উপর দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত আরেকটি সমীক্ষা অনুযায়ী, জনসংখ্যার ৪২% এখন দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে।
বাজেট নিয়ে জনগণের যা প্রত্যাশা
আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা সানজিদা ইসলামের মতে, "সঠিক নজরদারির মাধ্যমে পণ্যমূল্য হ্রাস করতে হবে। ঢাকায় সীমিত আয়ের মাধ্যমে একটি পরিবার চালানো বেশ কঠিন।"
বাজেট নিয়ে তিনি তার প্রত্যাশা প্রকাশ করে বলেন, "মহামারির কারণে আমার ছেলে চাকরি হারিয়েছে। আমরা এমন একটি বাজেট আশা করছি যা আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলবে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে।"
শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী সাইদুর রহমান বলেন, "পুঁজিবাজারে কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করতে হবে যাতে নতুন সংস্থাগুলি বাজারে প্রবেশ করতে পারে এবং মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে। এটাই বাজেট নিয়ে আমার প্রত্যাশা।"
নিউ মার্কেট এলাকায় মোবাইল আনুষাঙ্গিক বিক্রয়কারী বাবু কুমার বিশ্বাস বলেন, "বাজেট তো কেবল ধনী ব্যক্তিদের জন্য, আমাদের কথা কে ভাবে? আমরা কেবল দিনে তিন বেলা খাবার চাই। অনেকবার নগদ অর্থ সহায়তার কথা শুনলেও তা এখনো পাইনি।"
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, "মধ্যবিত্তরা সাহায্য চাইতে খুব সংকোচবোধ করে। সরকারের উচিত করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট ১,০৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মধ্যবিত্তরা এর আওতাভুক্ত নন।"
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের (৩ জুন) বাজেটটি হওয়া উচিত কর্মসংস্থানের জন্য। উৎপাদনহীন ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হ্রাস করে উৎপাদনহীন, সামাজিক সুরক্ষা এবং চাকরির সৃজনশীল প্রকল্পের বরাদ্দ বাজেট বাড়াতে হবে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএ) সভাপতি অধ্যাপক আবুল বরকত বলেন, "চলমান মহামারির কারণে অধিকাংশ মানুষই বিভিন্নভাবে দরিদ্রতার মধ্যে পড়েছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে নতুন আরেকটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।"
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, "সামাজিক সুরক্ষার জন্য দুই কোটি পরিবার উপযুক্ত ছিল। সংখ্যাটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ কোটিতে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা আরও বাড়বে। এ কারণেই বর্তমান বাজেটে এই খাতে যা বরাদ্দ, সেটিকে ৭ গুণ বাড়ানোর জন্যে আমরা বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছি।"