বাংলাদেশে আটার দাম বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এরইমধ্যে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটার দাম ২৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বেড়েছে চালের দামও। চিকন চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম আগের মতই আছে।
আটার জন্য গম আমদানিতে বাংলাদেশ অনেকটাই রাশিয়া ও ইউক্রেনের উপর নির্ভরশীল। জানা গেছে, দেশের মোট চাহিদার অর্ধেক আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
তবে এই মুহূর্তে দেশে যে পরিমাণ গম মজুদ আছে তা দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা গেলেও যুদ্ধের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করলে দেশের বাজারে তা প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা গেছে, দেশে এখন ২০ লাখ টন গম মজুত আছে। ভোক্তা অধিদপ্তর জানিয়েছে, আপাতত এটা নিয়ে সংকট হওয়ার কথা নয়। এটা নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানা গেছে। তবে শুধু গম নয়, আমদানি নির্ভর সব পণ্যের জন্যই বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “যুদ্ধের প্রভাবে সব কিছুর দামই বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। তবে এখানে যেটা হয়েছে তা হলো খুচরা, পাইকারি এবং মিল সব পর্যায়েই দাম ‘ম্যানুপুলেট’ করা হয়েছে।”
এখন চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। চিকন চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। দাম বেড়েছে আটা মসুর ডাল, ছোলা, মুরগি, ডিম এবং শাক সবজির। তবে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে।
কলাবাগানের মুদি দোকানদার মো. মিন্টু মিয়া বলেন, “সব কিছুর দামই বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। আটার দামও বাড়তে শুরু করেছে। কেজিতে তিন-চার টাকা বেড়ে গেছে। চালের দাম বাড়ছে। মশুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ১০টাকা।”
তার কথা, “ব্যবসায়ীরা বলছে যুদ্ধের কারণে দাম বাড়বে৷ তাই বাজারে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।”
এদিকে যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও যারা সুযোগসন্ধানী দলের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ শনিবার লালমাটিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, “লায়েকুজ্জামান নামের ওই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির আশায় ৬ মার্চ ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল কিনে তার বাসায় স্টক করে রেখেছিলেন। ওই তেল উদ্ধার এবং তাকে আটক করা হয়েছে।”
তিনি জানান, তাদের আশঙ্কা এরকম আরও অনেক ব্যবসায়ী এবং সুযোগসন্ধানীরা সয়াবিন তেলসনহ নানা ভোগ্যপণ্য স্টক করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মুরগির খামার, বাথরুমসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্টক করা সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সরকার ভোজ্য তেলসহ আরও অনেক ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি সয়াবিন তেলসহ চারটি পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত। ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে শুরু হবে ১৫ মার্চ থেকে।
এছাড়া সয়াবিন, চিনি ও ছোলার উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। সয়াবিনের ওপর থেকে ২০% ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। এর বাইরে ভোক্তা অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করছে।
ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমে এসেছে। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে এখনো আসেনি।
বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে চার থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। কিন্তু সেটা প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বেশি। খোলা সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের সরকার নির্ধারিত দাম ১৪৩ টাকা। কিন্তু সেটা এখনো ১৬৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
বোতলজাত সয়াবিনের দামও কমেছে। কিন্তু ভ্যাট প্রত্যাহারের পর বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা থেকে কমে ১৬০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তা ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেন, “সরকার আসলে ব্যবসায়ীদের এতদিন আস্কারা দেওয়ার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা সরকারের নির্দেশ মানছে না।”
তিনি বলেন, “আমদানি পণ্যের দুই মাসের মজুদ থাকার পরও তারা ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সব কিছুর ওপর। ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় অন্য পণ্যের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন আমরা বসে থাকব কেন? তারাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”
তার কথা, “ভ্যাট প্রত্যাহারের পর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩০ টাকা কমা উচিত ছিলো। কিন্তু কমেছে চার-পাঁচ টাকা। ব্যবসায়ীরা এখন বলছে আগে আমরা বেশি দামে কিনেছি তাই কমাতে পারছি না। তো কম দামে কেনা তেলের দাম তারা কেন বাড়ালো? এগুলো কে দেখবে?”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মনে করে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে পড়তে আরও সময় লাগবে। কারণ এখনো এসআরও জারি হয়নি। আর সে অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সিন্ডিকেট ভেঙে গেলে বাজার আরও সহনীয় হবে।