গত আগস্টে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫২% এ পৌঁছেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে ৯.১০% এ দাঁড়িয়েছে। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য খুবই উদ্বেগজনক।
এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০%।
মহামারির ধাক্কা সামলানোর পর বাংলাদেশে চলমান মুদ্রাস্ফীতি গত কয়েক মাস ধরে খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এজন্য অবশ্য বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা অনেকাংশে দায়ী। এর বাইরেও বাংলাদেশে নানাবিধ কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ফলে সারাবিশ্বের মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থির সঙ্গে বাংলাদেশের সমীকরণটি আলাদা।
বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এছাড়া মধ্যস্থতাকারী, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত মুনাফা লাভসহ অন্যান্য অনেক কারণে এটি সহনীয় পর্যায়ে নেই।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত আগস্টে পৌঁছেছে ৯.৯৪% এ। সেপ্টেম্বরে তা সামান্য কমে দাঁড়ায় ৯.০৮% এ। অন্যদিকে, অন্যান্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে ছিল ৮.৮৫%। তবে সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৯.১৩% এ। এছাড়া চলমান অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার উদ্বেগের আরেকটি কারণ, শহর ও গ্রামীণ এলাকায় আলাদা আলাদা মূল্যস্ফীতি। আগস্টে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.১৮% আর গ্রামে সেটি ছিল ৯.৭০%।
গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতিও একইভাবে বেশি ছিল। ফলে সেখানকার বাজারগুলো শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি অস্থির। এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যা করণীয়
মূল্যস্ফীতির বড় ধাক্কার কারণ জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি অন্যান্য সমস্ত পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে আমরা সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি।
জ্বালানি খাতে দুর্নীতি এবং অপচয় রোধ করা জরুরি। এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যার ফলে ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। যা ভোক্তাদের জন্য উৎপাদন খরচ এবং পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সরকারকে দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। সব সেক্টরের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা কমাতে হবে। খাদ্য সামগ্রীর মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেন কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। বাজার সিন্ডিকেট নির্মূল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
মুক্ত-বাজার ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সুদের হার নির্ধারণ করা উচিত। যা কার্যত অকেজো হয়ে গেছে। উচ্চ সুদের হার ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির একটি নীতি প্রতিক্রিয়া। যখন মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার জন্য সুদের হার কমাতে পারে।