ব্যাংকিং খাতকে অধিকতর যুগোপযোগী ও এই খাতে নতুন কর্মসংস্থানের কথা ভাবছে সরকার। সেই ভাবনার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আরও সম্প্রসারণ করা হবে। এতে তথ্য প্রযুক্তিতে স্নাতকদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে উচ্চস্তরের অটোমেশন প্রক্রিয়া ও ওয়েব-ভিত্তিক সেবা বৃদ্ধি করা গেলে মুদ্রিত কাগজপত্র ও ফর্ম পূরণ না করেও ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রার কথাও বিবেচনা করছে।
এ সংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিডিবিসি) প্রবর্তন ভার্চুয়াল লেনদেনে মুদ্রা সহজতর করবে। এটি স্টার্টআপ ও ই-কমার্স ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে। বিভিন্ন উন্নত দেশ যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ভারতসহ এশিয়ার কিছু উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক বাস্তবায়ন বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো পরিষেবা চালু করায় জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সহজতর করেছে। তবে, লেনদেনের আন্তঃপরিচালনার অভাবে ব্যবহারকারীরা সরাসরি লেনদেন করার সুযোগ পাননি।
তথ্য বলছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও গতিশীল করতে সরকার দেশে অভ্যান্তরীণ আর্থিক সেবা চালু করেছে। এক্ষেত্রে আন্তঃলেনদেনের জন্য নামমাত্র ফি এবং চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার সর্বস্তরের মানুষের জন্য মানসম্পন্ন আর্থিক পরিষেবার অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক সংহতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল-বাংলাদেশ (এনএফআই এস-বি) প্রণয়ন করেছে।
এর মূল উদ্দেশ্য হল, একটি বিস্তৃত কাঠামো দেওয়া। এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সকল স্টেকহোল্ডারদের কাজের সমন্বয় ও অগ্রাধিকার বাড়ানো যেতে পারে।
এই কৌশলের অধীনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এনএফআই এস জাতীয় কাউন্সিল (এনএনসি) গঠন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, “এই সকল পদক্ষেপ বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ার ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে।”
বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সির বিকল্প হিসেবে তাদের মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ চালু করতে কাজ করছে।
সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিডিবিসি) চালু করার মূল উদ্দেশ্য হল, ভার্চুয়াল লেনদেনে মুদ্রা সহজতর করা ও স্টার্টআপ এবং ই-কমার্স ব্যবসাকে উৎসাহিত করা। বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশে ইন্টারনেট ও ই-কমার্সের কভারেজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই অবস্থায় দেশে ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাবে।
পদ্ধতিগত ঝুঁকি চিহ্নিত করতে ও অর্ধ-বার্ষিক ভিত্তিতে স্টেকহোল্ডারদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে বাংলাদেশ সিস্টেমিক রিস্ক ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হচ্ছে।
আর্থিক ব্যবস্থায় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করার জন্য আর্থিক প্রজেকশন মডেল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া আন্তঃব্যাংক লেনদেনের প্রকৃতি, ঝুঁকি ও সংক্রামক প্রভাব নির্ধারণের জন্য একটি আন্তঃব্যাংক লেনদেন ম্যাট্রিক্স প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যাতে ব্যাংকগুলোকে চাপের ভেতর রেখেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত করা যায়।