৩২ দলের অংশগ্রহণে কাতারে চলছে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। বাংলাদেশেও লেগেছে এই খেলার হাওয়া। প্রতিবারের মতো পাড়া-মহল্লায় তর্কের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে পছন্দের দলের জয় পরাজয়ের হিসেব-নিকেষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার নাম। বিশ্বকাপে এ দুটি দলের সমর্থকের সংখ্যাই বাংলাদেশে বেশি।
ফুটবল ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার।
এর মধ্যে শুরুতেই আসে তৈরি পোশাক খাতের কথা। বাংলাদেশে এই দুই দলের জার্সি নিয়ে যেমন উন্মাদনা রয়েছে। তেমনই দুটি দেশেই “মেড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগযুক্ত পোশাক পরেন অনেকেই।
বাংলাদেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাসহ ২০১টি দেশ এবং অঞ্চলে পোশাক রপ্তানি করে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দুই দেশের নামকরা ব্র্যান্ড ও খুচরা দোকানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পাওয়া যায়।
দুটি দেশেই ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, খেলনা, গদি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রায় একই ধরনের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক যায় দুই দেশেই।
আর্জেন্টিনার চেয়ে ব্রাজিলে ১০ গুণ বেশি পণ্য রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে এমন ২০টি দেশের মধ্যে ব্রাজিলের অবস্থান অষ্টম। আর্জেন্টিনার অবস্থান ১৯তম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্রাজিলে ১১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের মূল্য ছিল ১০৬.৬৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ব্রাজিল থেকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। যার বেশিরভাগই চিনি, কফি, তুলা, গম, তেলবীজ, লোহা ও ইস্পাত।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “২০০৯ সাল থেকে তারা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বাজার ধরতে কাজ করে যাচ্ছে।”
“ব্রাজিলের বাজারে দুটি প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ আমদানি শুল্ক ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন,” তিনি যোগ করেন।
ফারুক হাসান আরও বলেন, “ব্রাজিল অনেক বড় ও সম্ভাবনাময় বাজার। কিছু ব্র্যান্ড উচ্চ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে পোশাক রপ্তানি করছে।”
“ব্রাজিলে রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা মুক্তবাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েও আলোচনা করেছি। তবে এখনও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি,” বলেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
ডিজাইনটেক্স নিটওয়্যার ব্রাজিলে সোয়েটার রপ্তানি করে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, “অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে ব্রাজিল খুবই আশাব্যঞ্জক।”
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “অনেক নির্মাতা ব্রাজিলে তাদের পণ্য রপ্তানি করে।”
তিনি বলেন, “ল্যাটিন আমেরিকা একটি খুব বড় বাজার। প্রচুর পরিমাণে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। যেহেতু তাদের ক্রয়ক্ষমতা ভালো, এটি বাজার সম্প্রসারণের জন্য একটি ভালো গন্তব্য হতে পারে।”
পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ এই দেশ দুটিতে ওষুধ ও কিছু প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে।
এদিকে, বাংলাদেশ আর্জেন্টিনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯.৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। ৮.৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানির ৮৮% এরও বেশি পোশাক পণ্য।
পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ম্যারাডোনার দেশে পাটজাত পণ্য, চামড়ার সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী ও খেলনাও রপ্তানি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে ৭৯১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যেখানে তুলা, চর্বি, তেল এবং গম ছিল প্রধান পণ্য।
জ্যামস নিটওয়্যার লিমিটেড আর্জেন্টিনায় পণ্য রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরদার আকবর সাদিক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “দেশের একজন ক্রেতা তাদের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করেন।”
“আর্জেন্টিনায় পণ্য রপ্তানি করে আমরা অল্প পরিমাণ আয় করি। যাই হোক, আমাদের বাজার দখল করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে,” তিনি যোগ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনার আমদানি শুল্কও বেশি, যা এই বাজার দখলের পথে বড় বাধা।”
ব্রাজিল তুলার একটি বড় উৎস, আরএমজি সেক্টরের প্রধান কাঁচামাল। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল বাংলাদেশে আরও বেশি তুলা রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব কটন গ্রোয়ার্সের (এবিআরএপিএ) চেয়ারম্যান জুলিও সেজার বুসাতো তার দেশের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কথা বলেছেন।
বর্তমানে, বাংলাদেশে ব্রাজিলীয় তুলার বাজারের অংশীদারিত্ব ১৩%। যা ব্রাজিলিয়ান তুলার তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারকও।
জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্সের (নোমান গ্রুপ) এক কর্মকর্তা জানান, দামে কম ও গুণগত মানে ভালো হওয়ায় তারা ব্রাজিল থেকে বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানি করেন।