রাজশাহীতে এবার আমের বাণিজ্য দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এর আগে সাধারণত এক মৌসুমে আমের ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকলেও গতবছর ১ হাজার কোটি টাকার মতো আমের বাণিজ্য হয়। যা এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। এ বছর চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “রাজশাহীতে এবার আমের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এসব আমের বাজার হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। এবার শুরুতেই বিদেশে আম রপ্তানি হচ্ছে।”
আম পাড়ার সময় নির্ধারণ
বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে রাজশাহীতে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় আম বাজারজাত করণের “ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার” প্রকাশ করা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে গুটি আম বাজারজাত করা যাবে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানি পছন্দ ২০ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ২৫ মে, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি বাজারজাত করা যাবে।
এছাড়া আশ্বিনা ও বারি আম-৪, গৌড়মতি আম ১০ জুলাই থেকে, ইলামতি আম ২০ আগস্ট থেকে বাজারজাত শুরু হবে। আর কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই বাজারজাত করা যাবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, “বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবারও সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এর আগে যদি কোনো মালিকের আম পেকে যায়, তাহলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আম বাজারজাত করতে পারবেন।”
আম যাচ্ছে ইতালিতে
এ মৌসুমে রাজশাহীর আমের প্রথম চালান ইতালিতে পাঠানো হচ্ছে। এরইমধ্যে প্যাকেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বুধবার রাতেই এসব আম ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ইতালিতে পাঠানো হবে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, “এবার শুরুতেই ইতালিতে আম রপ্তানি করা হচ্ছে। বাঘা থেকে আমগুলো ইতালিতে যাবে। এগুলো স্থানীয় জাতের চোষা আম। প্রথমে ৩০০ কেজি আম যাবে। ঢাকার আদব ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এসব আম যাবে।”
বাঘার আমবাগান ও সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানার সঙ্গে বুধবার কথা হয় ঢাকা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, “বুধবার ঢাকাতে আম পাঠানো হচ্ছে। কাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা থেকে ইতালিতে যাবে। এটা গুটি প্রজাতির লোকাল আম। এই আমটা এবারই প্রথম যাচ্ছে। এই জাতের আম আগাম হয়। খেতেও খুব ভালো স্বাদের। এই আমটা লোকালই চাহিদা বেশি। পুরো ৩০০ কেজি আমই আমার এখান থেকে যাচ্ছে।”
কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেন বলেন, “এবার শুরুতেই বিদেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। শুরুতেই গুটি জাতের আম বাঘা থেকে ইতালিতে যাবে। আমগুলো দেশি গুটি জাতের চোষা আম।”
রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের আয়োজিত সভায় রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) আনিসুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নেই আম পাড়ার ক্যালেন্ডার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার থাকছে না আম পাড়ার ক্যালেন্ডার। আমচাষী, কৃষক, উদ্যোক্তা ও আম রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে বিভিন্ন জাতের আম পাঁকলেই গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে পারবেন কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, “আমচাষী, উদ্যোক্তা ও কৃষকদের দাবিতে এবার আম ক্যালেন্ডার করা হচ্ছে না। তবে সব উপজেলায় আম বাজারজাতকরণ ও পরিবহনে যেকোনো ধরনের অনিয়ম রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আম পরিবহনের সুবিধায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সড়ক ফাঁকা রাখা হবে। আম পরিবহনের সময় ট্রাক ভাড়া বেশি দাবি করলে এবং অতি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের জন্য একটি কন্ট্রোল সেল করা হবে। এখানে যেকোনো সমস্যা বা অভিযোগ জানানো যাবে। যারা অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন, তারা কোনো সমস্যায় পড়লে আমরা সহযোগিতা করব। জেলার কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকেও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন বেশিদিন ধরে চালানো ও বগি বাড়ানোর আবেদন করা হবে।