নিয়মিত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। মরিচ, পেঁয়াজ, ডিমের পর এই তালিকায় এখন মসুর ডাল। গত আগস্ট থেকেই মসুর ডালের দাম বাড়তে শুরু করে। ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে এ সপ্তাহে প্রোটিনের সবচেয়ে মৌলিক উৎসের এই পণ্যের দাম খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়েছে।
এমন সময়ে এটির দাম বেড়েছে যখন, নিম্ন-আয়ের এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ মাছ, মাংস, ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, মোটা দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া মাঝারি ও চিকন দানার ডালের দাম আগস্ট থেকেই কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে।
বর্তমানে মসুর ডাল প্রতি কেজি ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিল ৯৫-১০০ টাকা।
মসুর ডালের মোটা মাঝারি ও চিকন দানার দাম এখন বাজারের বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের মতো উচ্চ দামে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
মাঝারি দানার মসুর ডাল আগস্ট থেকে প্রতি কেজি ১১০ টাকা থেকে পাঁচ টাকা বৃদ্ধির পর প্রতি কেজি ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মাসের শেষের দিকে সেটি ১৩০-১৩৫ টাকা ও ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও তাদের দৈনিক বাজার বিশ্লেষণে একই অবস্থা পেয়েছে।
টিসিবি জানায়, আগস্ট মাস থেকে মোটা ও মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম যথাক্রমে ৫.২৬% এবং ৪.৪৪% বেড়েছে।
তবে, কাঁচাবাজারে অন্যান্য ডাল যেমন মুগ, অ্যাংকর ও ছোলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এগুলো প্রতি কেজি যথাক্রমে ৯৫-১৩৫ টাকা, ৭০-৭৫ টাকা, ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজারে প্যাকেটজাত মসুর ডাল ছাড়াও সুপারমার্কেটগুলোতে প্যাকেটজাত মসুর ডাল পাওয়া যেতো। ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে প্রতি কেজি ১৪৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হতো।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের বিক্রেতা বাবলু জানান, গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে মসুর ডালের দাম, বিশেষ করে মোটা দানার দাম বাড়ছে।
“কেন বেড়েছে আমরা জানি না। ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয় তাই বর্ধিত দামে বিক্রি করছি। কিন্তু সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই ও অন্যান্য মসুর ডালের উৎপাদন খরচ বাড়েনি,” যোগ করেন তিনি।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, এরইমধ্যে আমদানির জন্য ওপেনিং লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে মসুর ডালের দাম বেড়েছে।
তাছাড়া ডলারের বাজার আবারও অস্থিতিশীল হওয়ায় এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় বাজারে বড় ধরনের কোনো সংকট সৃষ্টি হওয়ার আগেই এলসি খোলার জটিলতা নিরসন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ডাল ব্যাবসায়ী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, এখন আবার আমদানি ব্যয় বেড়েছে যার জন্য মসুর ডালের দাম একটু বেশি।
“বিশ্ববাজারে মসুর ডালের দাম টনপ্রতি ৯০০ ডলার থাকলেও এখন তা এক হাজার ডলারের বেশি, যা আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে। তাছাড়া, আমদানি এলসি খোলার জটিলতা এখনো রয়ে গেছে,” যোগ করেন তিনি।
তাছাড়া আমদানি এলসি খোলায় জটিলতার পাশাপাশি ব্যাংকে ডলার পেতে অসুবিধা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) অনুসারে, মাথাপিছু দৈনিক ডালের চাহিদা ৪৫ গ্রাম। ফলে দেশে সব ধরনের ডালসহ বার্ষিক মোট চাহিদা প্রায় ২.৬-২.৭ মিলিয়ন টন।
দেশে গড় উৎপাদন ৯০০,০০০-১ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ৬০% ডালের ঘাটতি থাকে ও বাংলাদেশকে ১.৭ মিলিয়ন টন ডাল আমদানি করতে হয়।
এদিকে, সমিতি বলছে, দেশে ডালের প্রকৃত বার্ষিক চাহিদা ৪-৪.৫ মিলিয়ন টন। যেখানে মসুর ডালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এর বার্ষিক পরিমাণটি প্রায় ২-২.৫ মিলিয়ন টন।
আগে, বাংলাদেশ সিরিয়া, তুর্কি ও ভারত থেকে বেশি ডাল আমদানি করতো। তবে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে বেশি আমদানি করে।
এফএও-এর মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ মসুর ডালের ষষ্ঠ বৃহত্তম উৎপাদনকারী।