ক্রেতা খরায় ভুগছে কেরাণীগঞ্জের কাপড়ের পাইকারি মার্কেট। সাধারণত শব-ই-বরাতের আগে থেকেই ঈদ বাজারের ব্যস্ততা শুরু হয় বিক্রেতাদের। কিন্তু এ বছর বেচাকেনা জমেনি এখনও। ব্যবসায়ীদের দাবি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারেও। কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় কমেছে খুচরা ক্রেতা। যারা আসছেন তারাও কিনছেন প্রয়োজনের তুলনায় কম কাপড়।
এদিকে পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেঞ্জি, শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, থ্রি পিস, বোরকা ও থান কাপড় মান ভেদে পাইকারি বিক্রিতে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটি শার্ট ও প্যান্টে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সাধারণ গেঞ্জিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং চায়না গেঞ্জিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এদিকে প্রতিটি শাড়িতে গজপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিটি শাড়িতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দাম বেড়েছে। আবার পাঞ্জাবি ও পায়জামাতে পিস প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে দাম বেড়েছে।
থান কাপড় ও থ্রি পিসে গজ প্রতি দাম বেড়েছে ১২-১৫ টাকা করে। বোরকায় প্রতি পিসে দাম বেড়েছে ১৫০-৩০০ টাকা।
“অথবা বোরকা হাউজ”-এর কর্ণধার মামুন দেওয়ান বলেন, “রমজান উপলক্ষে বিক্রি আগের বছরের চেয়ে কম। মূল্যবৃদ্ধির তালিকা থেকে বাদ যায়নি কাপড়ও। বোরকা প্রতি দাম ২০/৩০ টাকা বেড়েছে। কখনো দিনে ২০০ পিছ, কখনো দিনে ৫০ পিছ বোরকা বিক্রি হয়। প্রতি পিছ ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাভ হয়।”
“কাজল পাঞ্জাবি”-এর দোকানি মাহবুব আলম বলেন, “গতবারের তুলনায় এবারের বিক্রি অনেক কম। এর আগের বছরগুলোতে পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু হতো শব-ই-বরাতের আগে থেকে। কিন্তু এবার বেশ কয়েকটা রোজা হয়ে গেল কিন্তু বিক্রি নেই।”
বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জিনিসপত্রের যে দাম, মানুষের জীবন চালানোই কঠিন। সেখানে মানুষ কাপড় কিনবে কীভাবে।”
“শখরং কালেকশন”-এর কর্মচারী মাসুদ রানা বলেন, “এ বছরের মতো খারাপ অবস্থা গত ১৫ বছরেও হয়নি। এ বছর বিক্রি নেই বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়ে দাম কিছুটা বেড়েছে। সারাদিন ধরে দোকানে বসে আছি কোনো ক্রেতা নেই। আমি মূলত শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করি।”
তিনি বলেন, “সব জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেজন্য মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই হিমশিম অবস্থা। তাই কাপড়ের দিকে মানুষের ঝোঁক কম এ বছর।”
“পার্ক ল্যান্ড”-এর ম্যানেজার সাব্বির হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়ের দাম পিস প্রতি ৩০-৫০ টাকা করে বেড়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর বেচা-কেনার পরিমাণ অনেক কম। মানুষের চাহিদা বেড়ে গেছে কিন্তু সেই হিসেবে বেতন অল্প। সেই টাকা দিয়ে খাদ্য ও অন্য জিনিসের প্রয়োজন মেটাতে কষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে ক্রেতাদের কাপড় কেনার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকে আমাদের ৩,০০০ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। আজকে আমাদের দোকানের কর্মচারীদের ইফতার বাবদ খরচ হবে কমপক্ষে ১,৫০০ টাকা। কর্মচারীর বেতন, দোকানের ভাড়া, লাইট খরচসহ আরও বিভিন্ন ধরনের খরচ আছে। বলতে গেলে ব্যবসার অবস্থা এই বছর খুব খারাপ।”
“আল মদিনা” পাঞ্জাবির দোকানের দোকানি ইয়ানুর হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়ের গজপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। এর আগের বছরগুলোতে দাম কম ছিল কাস্টমারও বেশি ছিল। এবারে কাস্টমার অনেক কম।”
“সাগর গার্মেন্টস”-এর মালিক সাগর বলেন, “শার্ট-প্যান্টসহ অন্যান্য কাপড়ের দাম পিস প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বেশি।”
কাপড়ের পাইকারি ক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, “আমি নওগাঁ থেকে কাপড় নিতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখলাম শার্ট-প্যান্টের দাম আগের থেকে অনেক বেড়েছে। যে শার্ট-প্যান্ট গত বছরে নিয়েছি ৭০০-৮০০ টাকা সেই একই মানের কাপড় এ বছর ১,০০০-১,২০০ টাকা। গত বছরের থেকে এ বছর খুচরা বিক্রিও কম হচ্ছে।”
গাজীপুর থেকে শার্ট, প্যান্ট ও শাড়ি কিনতে এসেছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, “প্রতি পিস পাঞ্জাবি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে বাড়লে বিক্রিও কমে যাবে।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা শামীম হায়দার বলেন, “এই বছর অন্য বছরের চেয়ে প্রতি গজ কাপড়ে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। যার কারণে হিসেবের চেয়ে বেশি টাকায় কাপড় কিনতে হচ্ছে।”
দাম বাড়ায় কম করেই কাপড় কিনছেন রাজশাহী থেকে আসা ক্রেতা আবু হানিফ। তিনি জানান, পাঞ্জাবি প্রতি প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে।