রাজশাহীর বাজারে এখন আমের সমারোহ। জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার বানেশ্বরে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ জাতের আম কেনাবেচা জমে উঠেছে। তবে এ মৌসুমের শুরু থেকেই দাম তুলনামূলক বেশি। গতবারের তুলনায় দেড় থেকে দুইগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগ।
রবিবার (২৬ মে) পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে এই জাতের আম কেনাবেচা হয়েছে প্রতি মণ ২,৪০০ থেকে ৩,০০০ টাকায়। একই সঙ্গে কেনাবেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও।
তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই বলছেন, গতবারের তুলনায় এ মৌসুমে আমের দাম বেশি। বানেশ্বর হাটে গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,৮০০ টাকা মণ দরে।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আম নিয়ে আসছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আম চাষি আব্দুল হান্নান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “গাছের আম পাকতে শুরু করেছে। রাতে কোনো কোনো গাছের পাকা আম ঝরে পড়ছে। গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে।”
এই ব্যবসায়ী বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম বেশি।” মৌসুমের শেষ পর্যন্ত দাম এমন থাকলে ভালো টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা তার।
বানেশ্বর হাটের বিক্রেতা রইসুল ইসলাম বলেন, “গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গুটি জাতের আমগুলোই বিক্রি হচ্ছিল, তবে এর চাহিদা কম। ক্রেতারা এগুলো আচারের জন্য কিনেছেন। এখন গোপালভোগ আমের বেচাবিক্রি ভালো।”
আড়তের বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, “হাটে আম বিক্রি হচ্ছে ঠিক। তবে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আম আড়ৎদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একত্রে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে অবশ্য খুচরা কেনা-বেচা হচ্ছে।”
পবা উপজেলার মড়মড়িয়া এলাকার ব্যবসায়ী মিজান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “অনলাইনে ব্যবসায়ীরাই আমাদের ক্রেতা। অন্যান্য পাইকাররাও আসেন কম-বেশি। এখন আমও কম, ক্রেতাও কম। কারণ শনিবার থেকেই আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এক-দুই দিন পর দেখা যাবে, বাজারে আম রাখার জায়গা থাকবে না। তখন ক্রেতাও অনেক থাকবে।”
সরকারের ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম বাজারে আসতে শুরু করে। এর আগে আসে গুটি আম। তবে গোপালভোগ আসার পর থেকেই বাজার জমে উঠেছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, “রাজশাহীর সর্বোৎকৃষ্ট আমগুলোর মধ্যে রয়েছে- গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরসাপাতি ও ল্যাংড়া। এবার তুলনামূলক আমের ফলন কম। তবে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের মণ ছিল ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকা। কিন্তু এবছর একই সময় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২,৪০০ থেকে ৩,০০০ টাকায়।”
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে ছালমা জানান, “এবার এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি। তাই কম মুকুল এলেও প্রায় সব আম গাছে টিকে গেছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো হবে।”
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহীতে আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। জেলায় এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩.২৮ টন।