Monday, March 17, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডলার বন্ডে বিনিয়োগ করবেন যেভাবে

প্রবাসীদের জন্য নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় হলো বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ড

আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ০৫:০২ পিএম

প্রবাসীদের জন্য নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় হলো বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ড। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা ইউএসডিআইবি। চলুন, এই বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কী

সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই এনআরবি বন্ড ইস্যু করা হয় মার্কিন ডলারে। এটি মূলত রেমিট্যান্সের বিপরীতে ফরেন কারেন্সি (এফসি) বা বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য নিবেদিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। অন্যান্য অধিকাংশ বন্ডের মতো এই বন্ডেও রয়েছে মুনাফা লাভ এবং সুদাসলের ওপর কর-মুক্তির সুবিধা।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বৈশিষ্ট্য

১. এই বিনিয়োগ সুবিধাটি অভিবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য।

২. বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে তাদের এফসি অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়।

৩. বন্ডের মূল্য রেমিট্যান্সের ওপর মার্কিন ডলারে যে কোনো মূল্যের হয়ে থাকে।

৪. বন্ডের মেয়াদ ৩ বছর।

৫. বর্তমানে সাধারণত ৫০০, ১,০০০, ৫,০০০, ১০,০০০, এবং ৫০,০০০ মার্কিন ডলার মূল্যমানের ইউএসডিআইবি ইস্যু করা হয়।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কেনার উপায়

১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

২. বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি (বাংলাদেশে অবস্থান করলে দেশে আগমন ও প্রস্থানের সিলসহ পৃষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে)।

৩. সম্প্রতি তোলা আবেদনকারী এবং নমিনি উভয়ের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি।

৪. ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার অনুলিপি।

৫. তহবিলের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র (চাকরির পরিচয়পত্র বা বেতন প্রাপ্তির রশিদ)।

৬. অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পাসপোর্টের অনুলিপি এবং আয় সংক্রান্ত নথি।

৭. সম্পূর্ণ পূরণকৃত এবং স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র।

বন্ড ক্রয় পদ্ধতি

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে বন্ড ক্রয়ের আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা যায়। এছাড়া দেশে বা বিদেশে এই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনামূল্যেই এই ফর্ম বিতরণ করে থাকে।

ফর্ম পূরনের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি যে কোনো ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করতে হবে। উপরোক্ত নথিপত্র ছাড়াও বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরতি ই-মেইলে এনআরবি গ্রাহককে অবহিত করবেন।

এরপর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মসহ যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তারপর আবেদনকারির বন্ডের মূল্য পরিশোধের সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বন্ড ইস্যু করবেন। পরিশেষে ক্রয়কৃত বন্ডের পরিচিতি স্বরূপ একটি অ্যাডভাইস কপি গ্রাহককে প্রেরণ করা হবে।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো হলো:

১. বাংলাদেশ ব্যাংক

২. দেশের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখা

৩. প্রতিনিধি অফিস, ফরেন করেসপন্ডেন্ট

৪. শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউস

বন্ড ক্রয়ের জন্য আবেদন পদ্ধতি

এই লিংক থেকে বন্ডে বিনিয়োগের আবেদন ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। 

ফর্ম পূরণে যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়, তা হলো:

১. আবেদনকারী বা বন্ড ক্রেতা এবং তার নমিনির নাম ও ঠিকানা

২. নমিনির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক

৩. বন্ড ক্রেতার পাসপোর্ট নম্বর

৪. বন্ডের মূল্য

৫. এফসি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং যেই ব্যাংকের যে শাখাতে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, তার নাম ও ঠিকানা।

৬. আবেদনকারীর পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান, এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ।

৭. বন্ড ক্রেতার চাকরির পদবি ও কোম্পানির নাম

৮. বন্ড ক্রেতার বাংলাদেশ ও বিদেশের ঠিকানা

৯. সবশেষে আবেদনকারীর স্বাক্ষর

অর্থপ্রদানের মাধ্যম

এনআরবি গ্রাহক বিদেশ থেকে তার এফসি অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে প্রেরিত অর্থ দিয়ে বন্ডের ক্রয়মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। বৈদেশিক মুদ্রায় ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার), চেক বা ড্রাফটের মাধ্যমে বন্ডের দাম পরিশোধ করা যাবে।

মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বন্ডে সুদের হার ৩ ধরনের বিনিয়োগের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগে সুদের হার-

১. বিনিয়োগের ১ বছরের পর থেকে অনূর্ধ্ব ২ বছর পর্যন্ত ৫.৫০%

২. ২ বছরের পর থেকে অনূর্ধ্ব ৩ বছর পর্যন্ত ৬%

৩. ৩ বছর মেয়াদপূর্তীতে ৬.৫০%

১ লাখ থেকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সুদের হার-

১. ১ বছর পর থেকে ২ বছরের আগ পর্যন্ত ৪%

২. ২ বছর পর থেকে ৩ বছরের আগ পর্যন্ত ৪.৫০%

৩. ৩ বছর শেষে ৫%

৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ

১. ১ বছর পর থেকে অনূর্ধ্ব ২ বছর পর্যন্ত ৩%

২. ২ বছর পর থেকে অনূর্ধ্ব ৩ বছর পর্যন্ত ৩.৫০%

৩. ৩ বছর মেয়াদপূর্তীর পর ৪%

বন্ডে বিনিয়োগের পর থেকে ১ বছরের আগেই নগদায়ন করলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না। সরল মুনাফা পদ্ধতিতে ধার্যকৃত মুনাফা দেওয়া হয় প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর।

উদাহরণস্বরূপ, ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে ১ বছর পর থেকে প্রতি ৬ মাসে পাওয়া যাবে ৮ হাজার মার্কিন ডলার করে। দ্বিতীয় বছর পর ১৮ হাজার এবং একই ভাবে ৩ বছর পর লাভের পরিমাণ দাড়াবে ৩০,০০০ মার্কিন ডলার। ইউএসডিআইবি’তে বিনিয়োগের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।

মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বন্ডের সুবিধা

১. বন্ডের নমিনি বা উত্তরাধিকার বন্ডে বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর ১৫ থেকে ২৫% মৃত্যু-ঝুঁকি সুবিধা পাবেন।

২. বিনিয়োগকৃত পরিমাণ এবং অর্জিত সুদ ছাড়াও মৃত্যু-ঝুঁকি বাবদ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে ফেরত পাঠানো যায়।

৩. এই বন্ড থেকে প্রাপ্ত সুদ-আসল আয়কর-মুক্ত।

৪. বন্ড ক্রেতা যে কোনো সময় ইস্যুকারী অফিসকে অবহিত করে আগের নমিনিকে প্রত্যাহার করে নতুন নমিনি নিযুক্ত করতে পারেন।

৫. বন্ড ক্রেতা তার এনআরবি স্ট্যাটাস বজায় রাখার শর্তে মেয়াদপূর্তির পর এই বন্ডে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন।

৬. বাংলাদেশে যে কোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে এই বন্ড মূল্যের ৭৫% পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করা যাবে।

৭. মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগকৃত মূলধন এবং অর্জিত সুদের অর্থ যে কোনো সময় বিদেশে ফেরত পাঠানো যাবে।

উপযুক্ত সুদের হার ও কর রেয়াতসহ ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগের একটি নিরাপদ উপায়। সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকায় বন্ডগুলো অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে তুলনামূলকভাবে উচ্চ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ঋণ গ্রহণ এবং মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা এনআরবি বন্ডের উপযোগিতা আরও বাড়িয়ে তোলে। সর্বসাকূল্যে, শুধুমাত্র আর্থিক মানোন্নয়নই নয়, এই বন্ড প্রবাসীদের সুযোগ দেয় দেশের বাইরে থেকেও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার।

   

About

Popular Links

x