প্রতি বছর ঈদ-উল-আজহার আগে রাজশাহীর সিটি হাটে সপ্তাহব্যাপী ‘‘বড় হাট’’ বসে। এই হাটে বেচাকেনা হয় হাজার হাজার কোরবানির পশু। শহর তো বটেই আশেপাশের উপজেলা এমনকি অন্যান্য জেলা থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন এ হাটে।
এবার ‘‘বড় হাট’’-এর প্রথম দিন ছিল রবিবার (২ জুন)।
প্রতি বছরের মতো এবারও প্রথম দিনেই জমজমাট বেচাকেনার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ইজারাদাররা। পশুও উঠেছিল বিপুলসংখ্যক। তবে দিনশেষে হতাশ হতে হয়েছে আয়োজকদের। কারণ অন্যান্য এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা হাটে আসেননি। তারাই ‘‘বড় ক্রেতা’’। ফলে হাতেগোনা কিছু বেচাচিক্রি নিয়েই শেষ হয়েছে প্রথম দিনের হাট।
হাটের প্রধান প্রবেশদ্বারের দু’পাশের দেড়-দুই শো মিটার রাস্তায় গরু না থাকলেও মূল হাটে প্রচুর গরু রয়েছে। কড়া রোদে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ব্যবসায়ী ও খামারি। কিন্তু ক্রেতার হাঁক-ডাক তেমন জমে ওঠেনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, যে দু’একজন করে ক্রেতা আসছেন, তারাও লাভ তো দূরের কথা, যে খরচ হয়েছে সে দামও বলছেন না।
ব্যবসায়ী ও ইজারাদাররা বলেন, এ হাটের মূল ক্রেতাই হলো বাইরের বড় ক্রেতারা। যারা বড় বড় গাড়ি করে গরু কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু এবার বড় ব্যবসায়ীরা আসেননি। এ কারণে বেচাবিক্রি জমেনি।
তারা আরও জানান, এবার গরুর দাম বেশি। এক লাখের নিচে কোরবানিযোগ্য গরু যেটিকে ‘‘দাঁতা গরু’’ বলে সেটি এবার মিলবে না।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, “বাইরের ব্যবসায়ীরা আসেনি। এ কারণে হাট জমেনি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল রবিবার থেকেই হাট জমে উঠবে। এখন দেখা যাক সামনের দিনগুলো কেমন হয়।”
গোদাগাড়ী উপজেলার সাগরপাড়া এলাকার মাসুদ রানা বলেন, “সুযোগ বুঝে ঈদের কয়েকদিন আগে হাটে কিংবা খামারে গিয়ে গরু কিনব।”
রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকার ক্রেতা তারেক রহমান বলেন, “এবারও গরু দাম চড়া। শহরে বাড়ি। তাই গরু রাখার সমস্যা। এজন্য ঈদের দুই-তিন দিন আগে কিনে খামারে রেখে আসব। আর ঈদের দিন ভোরের দিকে নিয়ে আসব। রাজশাহীর গরু দেশের অন্য প্রান্তে চলে যাওয়ায় দাম বেশি হয়।”
পবিত্র ঈদ-উল-আজহাকে কেন্দ্র করে এ বছর রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ৮৩,৩৬৫টি, মহিষ ৩,৭৬৯টি ও ছাগল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। তবে
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, “রাজশাহীতে বিগত বছরের তুলনায় এবারও পশু চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। এবার উৎপাদন খরচ বেশি, দামও কিছুটা বেশি হবে। এটাই স্বাভাবিক।”