বাংলাদেশে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি পাওয়ার লিমিটেড। আদানি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের পুরো সক্ষমতা অর্থাৎ ১৬০০ মেগাওয়াটই বাংলাদেশে সরবরাহ শুরু করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিয়মিত বকেয়া পরিশোধ করতে শুরুর পরই আদানি এই উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত বছর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে আদানি। এর চার মাস পর অবশেষে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে আবারও পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিপিডিবি’র চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ব্লুমবার্গকে বলেন, “আমরা নিয়মিতভাবে আদানিকে অর্থ পরিশোধ করছি এবং আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি।”
তবে তিনি পরিশোধের পরিমাণ এবং অতীতের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানাননি। বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, আদানি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে বাংলাদেশজুড়ে গড় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার আশপাশেই থাকে। এই অবস্থায় আদানির সরবরাহ পুনরুদ্ধার হওয়ায় গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বাংলাদেশে লোডশেডিং অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হবে।
এর আগে, গত নভেম্বরে বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা একাধিকবার পরিবর্তন হওয়ায় ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ১,৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে আদানি। তবে এ বিষয়ে আদানির পক্ষ থেকে তখন কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রতি ইউনিটের সক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট করে। এ দুটি ইউনিট শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় ৩১ অক্টোবর আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর জেরে ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাত্র ৪২% সক্ষমতায় পরিচালিত হতে থাকে। পরবর্তীতে বাংলাদেশই আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে বলে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তারা আদানির বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে আসছে। তাই তারা এখন দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলেছে।
গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানায়, আদানিকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তবে সেই সময় বিপিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, প্রকৃত পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুতের দাম কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই বিরোধ ছিল। ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুতের মূল্য দুটি সূচকের গড় থেকে নির্ধারিত হয়েছিল। তবে রয়টার্স দাবি করেছে, আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের মূল্য থেকে ৫৫% বেশি।